গণভোট প্রস্তাবকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বললেন রুমিন ফারহানা

গণভোট প্রস্তাবকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বললেন রুমিন ফারহানা

রাজনীতি ডেস্ক

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, দীর্ঘ আলোচনার পরও দলগুলোর ভিন্নমত বা ‘ডিসেন্টিং পয়েন্ট’ স্পষ্ট না করেই গণভোটের বিষয়ে আদেশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা তিনি ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ২৭০ কার্যদিবস আলোচনার পরও যেসব বিষয়ে বিএনপি ভিন্নমত পোষণ করেছে, সেসব প্রশ্ন স্পষ্টভাবে উপস্থাপন না করে গণভোটে সরাসরি প্রস্তাব রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “ভোটে যে প্রশ্নটি থাকবে, সেখানে ভিন্নমতের বিষয়টি উপেক্ষা করে সনদ ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা, আর এই প্রতারণাকে আমরা ‘না’ বলছি।”

রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই জানিয়ে আসছে যে, যেদিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেদিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে দলটি অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রক্রিয়ায় সে প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “আমরা লক্ষ্য করলাম, আমাদের প্রস্তাবের প্রতি ন্যূনতম কর্ণপাত না করেই গণভোটের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।”

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে বিএনপির অবস্থান কী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে দলীয় পর্যায়ে আলোচনা শেষে বিএনপি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন নির্ধারিত হয়েছে, সেটি যদি কোনো কারণে পিছিয়ে যায় বা দ্রুত নির্বাচনের পথে না যায়, তাহলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে শক্তি থাকার কথা, সেটি দুর্বল হয়ে পড়বে।”

বিএনপির এই নেত্রী আরও বলেন, গণভোটের প্রশ্নটি সাংবিধানিক হলেও সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও উদ্বেগ মূলত দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোকে ঘিরে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আজ ভাবছে তারা ঠিকমতো সস্তায় পণ্য কিনতে পারছে কি না, খাবার ও চিকিৎসা সুলভ মূল্যে পাচ্ছে কি না, হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সেবা মিলছে কি না, তাদের সন্তানরা পড়াশোনা শেষে চাকরি পাচ্ছে কি না বা দেশের বাইরে গিয়ে উপার্জনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে কি না— এই বিষয়গুলোই তাদের মূল চিন্তা।”

তিনি আরও বলেন, “গণভোটে যে প্রশ্নগুলো তোলা হচ্ছে, সেগুলো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। যখন তারা দেখবে যে, তাদের জীবনের সঙ্গে এর সংযোগ নেই, তখন ‘না’ ভোটের পক্ষে একটি প্রবণতা তৈরি হতে পারে।”

রুমিন ফারহানা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরও যে বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য রয়ে গেছে, সেগুলো স্পষ্ট না করে গণভোট আয়োজন করলে তা জনগণের কাছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। তাঁর মতে, গণভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকা জরুরি, যাতে ভোটের ফলাফল দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, বিভাজন নয়।

তিনি বলেন, “যদি গণভোটের প্রশ্নে জনগণের মতামত গ্রহণের আগেই সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে যায়, তাহলে সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। একটি কার্যকর গণভোটের জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, সমান সুযোগ এবং সকল পক্ষের মতামতের প্রতিফলন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সম্ভাব্য গণভোটকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। রুমিন ফারহানার মন্তব্যে সেই অবস্থানেরই প্রতিফলন দেখা গেছে, যেখানে দলটি গণভোটকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে।

প্রসঙ্গত, সরকার পক্ষ থেকে সম্প্রতি গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দল এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ