সুদানের দারফুরে আরএসএফ-এর গণহত্যা: স্যাটেলাইটে ধরা পড়ল ভয়াবহ চিত্র

সুদানের দারফুরে আরএসএফ-এর গণহত্যা: স্যাটেলাইটে ধরা পড়ল ভয়াবহ চিত্র

অনলাইন ডেস্কঃ

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের দারফুর অঞ্চলে বিদ্রোহী আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শহর দখলের পর ঘরে ঘরে গণহত্যা চালাচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এমনকি স্যাটেলাইট চিত্রেও ধরা পড়েছে।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল) জানাচ্ছে, স্যাটেলাইটে শহরের বিভিন্ন স্থানে দেহ সদৃশ অসংখ্য বস্তু দেখা গেছে। এসব বস্তুতে রক্তের দাগ স্পষ্ট, এবং হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা, শহরের উপকণ্ঠ ও সরকারি সেনা ঘাঁটির কাছাকাছি এই নিথর দেহ শনাক্ত করা হয়েছে।

এইচআরএল-এর গবেষক ন্যাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, “আরএসএফ শহর দখলের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গণহত্যা চালায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১.৩–২ মিটার দৈর্ঘ্যের হাজারো বস্তু মাটিতে ছড়িয়ে আছে, যা মানবদেহের সঙ্গে মিলে যায়।”

দারাজা উলা এলাকায় আরএসএফ সদস্যরা যানবাহন নিয়ে ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়েছে। ভিডিও, স্যাটেলাইট চিত্র ও বেঁচে যাওয়া নারীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, পুরুষদের আলাদা করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শহরের প্রতিরক্ষাব্যূহ বরাবর অন্তত ছয়টি দেহের স্তূপ পাওয়া গেছে, যেখানে আরএসএফ-এর সামরিক যানও দেখা গেছে। নতুন চিত্রে মৃতদেহের স্তূপ আরও বেড়েছে এবং আগের দেহগুলোও সেখান থেকে সরানো হয়নি।

‘সৌদি হাসপাতাল’ এলাকায় অন্তত চারটি দেহের স্তূপ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রথম দিন মানুষদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়েছিল, পরের দিন একই স্থানে দেহের স্তূপ দেখা যায়— এটি বন্দি হত্যা প্রমাণ করে।

আরএসএফ এখন শহরের সেনা ঘাঁটিও দখলে নিয়েছে। ২৬ অক্টোবরের স্যাটেলাইট চিত্রে সুদানি সেনাদের ছেড়ে পালানোর পর ঘাঁটিতে অন্তত ১৫টি নতুন বিস্ফোরণ ও পোড়া দাগ দেখা গেছে। রেমন্ড বলেন, “এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সম্ভবত আরএসএফ-এর সঙ্গে চুক্তি করেই তারা রাতের আঁধারে পালিয়েছে, সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলে গেছে।”

১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ এল ফাশের শহর এখন পুরোপুরি বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। জাতিসংঘ এটিকে “দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দু” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই অভিযান আরও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের সূচনা হতে পারে।

পালাতে সক্ষম ব্যক্তিদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, পুরুষদের আলাদা করে হত্যা করা হচ্ছে, আর নারীরা ও শিশুরা লুকিয়ে আছে। রেমন্ড বলেন, “এখন হত্যাযজ্ঞ আরও জোরালো হবে। যারা লুকিয়ে আছেন, তারাই পরবর্তী টার্গেট।”

এবারের আরএসএফ অভিযান আগের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত। তারা শহর দখলে নেওয়ার সময় ঘরবাড়ি না জ্বালিয়েও পদ্ধতিগতভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে, যা দারফুর গণহত্যার ২০ বছর আগে শুরু হওয়া ইতিহাসের চূড়ান্ত অধ্যায়ের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক