ডেস্ক:
চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানিতে ব্যাপক পতন ঘটেছে। দেশটির থিংক ট্যাঙ্ক ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, পাঁচ মাসে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
জিটিআরআই-এর তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বর মাসে নেমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ওষুধ, স্মার্টফোন, ধাতু, গাড়ি ও শ্রমনির্ভর খাতের পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে।
সংস্থাটির পরিসংখ্যানে বলা হয়, ফার্মাসিউটিক্যাল বা ওষুধ খাতে রপ্তানি মে মাসের ৭৪৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার থেকে সেপ্টেম্বর মাসে নেমে দাঁড়ায় ৬২৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারে—যা ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ পতন। একইভাবে শিল্পধাতু ও গাড়ির যন্ত্রাংশের রপ্তানি ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৬০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ৫০০ মিলিয়নে পৌঁছেছে।
জিটিআরআই–এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট খাতে রপ্তানির হ্রাস আরও তীব্র। তার মতে, অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি কমেছে ৩৭ শতাংশ, তামা ২৫ শতাংশ, গাড়ির যন্ত্রাংশ ১২ শতাংশ এবং লোহা-ইস্পাত ৮ শতাংশ কমেছে।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী একই ধরনের শুল্ক প্রযোজ্য থাকায় এই হ্রাস সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতের মন্দার প্রতিফলন, ভারতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাসের কারণে নয়।”
জিটিআরআই-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শ্রমনির্ভর খাত যেমন টেক্সটাইল, রত্ন ও গহনা, রাসায়নিক, কৃষিপণ্য ও যন্ত্রপাতির রপ্তানিও ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এসব খাতে রপ্তানি মে মাসের ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে সেপ্টেম্বর মাসে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানির এই পতনকে “গভীর ও বিস্তৃত প্রভাব” বলে অভিহিত করেছেন শ্রীবাস্তব। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একাধিক খাতে একযোগে এই ধস ভারতের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌর প্যানেল খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মে মাসে ২০২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের সৌর প্যানেল রপ্তানি সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারে—যা ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস।
এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে। মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ খাতে রপ্তানি ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে আসে ৫৯৭ মিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ পতন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪৪ শতাংশ, গৃহসজ্জার টেক্সটাইল ১৬ শতাংশ, এবং সুতা ও ফেব্রিকস ৪১ শতাংশ কমেছে।
সামুদ্রিক পণ্য খাতও উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে পড়েছে। মে মাসে ২২৩ মিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি সেপ্টেম্বর মাসে নেমে আসে ১১৩ মিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। শ্রমনির্ভর এই খাতের জন্য এটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র গত ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের বহু পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। রাশিয়ার তেল ক্রয় ও ইউক্রেনে আগ্রাসনে মস্কোকে পরোক্ষভাবে সহায়তার অভিযোগে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে ওয়াশিংটন।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন শুল্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারতের রপ্তানি খাত সামনের মাসগুলোতেও চাপের মুখে থাকবে।


