টিক সাইজ’ পরিবর্তনের প্রভাবে সার্কিট ব্রেকার ভেঙে পড়ল দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর

টিক সাইজ’ পরিবর্তনের প্রভাবে সার্কিট ব্রেকার ভেঙে পড়ল দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর

অর্থনীতি ডেস্ক

দেশের পুঁজিবাজারে এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের জন্য নতুন ‘টিক সাইজ’ বা সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তনের সীমা নির্ধারণের পর সোমবার (৩ নভেম্বর) দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে অস্বাভাবিক পতন দেখা দিয়েছে। সার্কিট ব্রেকার সীমা অতিক্রম করে এই দরপতনের শিকার হয়েছে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার বা দৈনিক দরবৃদ্ধি–দরপতনের সীমা ১০ শতাংশ নির্ধারিত থাকে। তবে নতুন দর সমন্বয়ের ফলে সোমবার দিনের শুরুতেই এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ শতাংশের বেশি কমে যায়, যা নিয়মের সীমা অতিক্রম করেছে।

সম্প্রতি ডিএসই এক টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারের জন্য নতুন টিক সাইজ নির্ধারণ করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই শেয়ারগুলোর দর এখন থেকে ১ পয়সা বাড়তে বা কমতে পারবে। তবে শেয়ারদর এক টাকার ওপরে উঠলে পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন পরিবর্তন হবে ১০ পয়সা। দিনশেষে যদি কোনো শেয়ারের দর এক টাকার ওপরে থাকে, তাহলে সেটি ‘রাউন্ড ফিগার’ বা পূর্ণ সংখ্যায় রূপান্তরিত হয়ে ১ টাকা হিসেবে গণ্য হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ারদর গত রবিবার লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ১ টাকা ৩ পয়সায়। সোমবার দিনের শুরুতে ‘রাউন্ড ফিগার’ সমন্বয় করে শেয়ারদর ১ টাকা করা হয়। তবে বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ারদর ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ১৩ পয়সা কমে ৯০ পয়সায় নেমে আসে।

একইভাবে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারদর গতকাল ছিল ১ টাকা ১ পয়সা। সোমবার সমন্বয় করে ১ টাকায় নামানো হয়। কিন্তু লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারটির দর ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ১১ পয়সা কমে ৯০ পয়সায় অবস্থান নেয়।

ডিএসই জানায়, সম্প্রতি এক টাকার নিচে নামায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন কার্যত স্থগিত হয়ে পড়েছিল। কারণ ৯০ পয়সা দরের শেয়ারে ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা, কিন্তু পুরোনো টিক সাইজ ছিল ১০ পয়সা—ফলে শেয়ারদর ৯ পয়সা কমানো বা বাড়ানো সম্ভব ছিল না। আবার ১০ পয়সা পরিবর্তন করলে সেটি সার্কিট ব্রেকারের সীমা লঙ্ঘন করত। এই অবস্থায় লেনদেন কার্যত ‘ফ্রিজ’ হয়ে পড়ে।

এই জটিলতা নিরসনে ডিএসই ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব পাঠায়, যাতে এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ারের জন্য নতুন টিক সাইজ নির্ধারণের অনুমোদন চাওয়া হয়। বিএসইসির অনুমোদন পাওয়ার পর ২৯ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে এক টাকার নিচে থাকা শেয়ারের লেনদেন আরও সূক্ষ্ম দরে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে—যেমন ৮৯, ৮৮, ৮৭, ৮৬ বা ৮৫ পয়সা দরে ক্রয়-বিক্রয়ের অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তন বাজারে স্থবিরতা কাটাতে সহায়তা করবে, যদিও শুরুর দিকে সার্কিট ব্রেকারের সঙ্গে টিক সাইজের পার্থক্যের কারণে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তারা মনে করেন, বাজার স্থিতিশীল হলে নতুন এই পদ্ধতি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বচ্ছ ও কার্যকর লেনদেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

অর্থ বাণিজ্য