অর্থনীতি ডেস্ক:
দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন টেলিকম নীতি বাস্তবায়নের ফলে ব্রডব্যান্ড সেবার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে যাচ্ছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) জানিয়েছে, নীতির প্রভাবে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
সোমবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইএসপিএবি সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম জানান, নতুন টেলিকম নীতি কার্যকর হলে বর্তমানে ৫০০ টাকায় পাওয়া সংযোগের খরচ বেড়ে হবে ৬০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দিতে হবে ১২০০ টাকা।
তিনি বলেন, “নতুন টেলিকম নীতিতে এমন কিছু বিধান যোগ করা হয়েছে, যা সরাসরি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের পরিচালন ব্যয় বাড়াবে। ফলে শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব পড়বে গ্রাহক পর্যায়ে।”
আইএসপিএবি সভাপতি সতর্ক করে বলেন, যদি সরকার দ্রুত নীতির সংশোধন না আনে, তবে দেশের ডিজিটাল খাতে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। তার ভাষায়, “টেলিকম পলিসি সংশোধন না করলে বাংলাদেশ ডিজিটালি শাটডাউন হয়ে যাবে।”
আইএসপিএবি জানায়, নতুন নীতিতে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য বিভিন্ন ফি, ভ্যাট ও লাইসেন্স নবায়নের ব্যয় বেড়েছে। একইসঙ্গে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ব্যবহারে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এসব ব্যয় সরাসরি তাদের অপারেশনাল খরচে প্রভাব ফেলবে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ওপর বর্তাবে।
দেশজুড়ে বর্তমানে প্রায় এক কোটি ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করছেন। আইএসপিএবি-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নীতির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংগঠনটি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতিটি পুনর্বিবেচনা করা হোক। তারা বলছে, ইন্টারনেট সেবার ব্যয় বৃদ্ধি শিক্ষা, ব্যবসা, প্রশাসন ও উদ্ভাবন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম রাজনৈতিক দলগুলোকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের উচিত হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, কারণ এটি সরাসরি দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি হালনাগাদ টেলিকম নীতি প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য টেলিকম খাতে ন্যায়সংগত প্রতিযোগিতা, রাজস্ব বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা। তবে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নীতিতে আরোপিত ফি ও নিয়মকানুন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেলিকম খাতে নীতিগত পরিবর্তনের সময় সরকার ও বেসরকারি অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে তা দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নতুন নীতির পর্যালোচনার জন্য এখন সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ।


