ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকৃতি ট্রাম্পের, ‘যুদ্ধ জটিল করতে চাই না’

ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকৃতি ট্রাম্পের, ‘যুদ্ধ জটিল করতে চাই না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চলমান যুদ্ধ আরও জটিল করতে চান না। তবে ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) মার্কিন বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন। রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি এমন কোনো চুক্তি বিবেচনা করছি না, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে টমাহক ব্যবহারের সুযোগ দেবে।”

মূলত, ন্যাটো সামরিক জোটের কয়েকটি সদস্যদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই অস্ত্র কিনে তা ইউক্রেনের কাছে সরবরাহ করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি চান না এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধকে আরও তীব্র বা বিস্তৃত করুক। তার মতে, বর্তমানে পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল, এবং এমন অস্ত্র সরবরাহ যুদ্ধক্ষেত্রের ভারসাম্য আরও নষ্ট করতে পারে।

ফ্লোরিডার পাম বিচ থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি এখন এমন কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চাই না, যা সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তবে ভবিষ্যতে আমার মত পরিবর্তনও হতে পারে।”

এর আগে, গত ২২ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। বৈঠকের পর রুটে জানান, বিষয়টি এখনও পর্যালোচনাধীন রয়েছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।

টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রকে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ১ হাজার ৫৫০ মাইল) পাল্লার এই ক্রুজ মিসাইল স্থলভাগ, নৌযান বা সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। এটি শত্রু ভূখণ্ডের গভীরে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম— এমনকি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার ওয়াশিংটনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রাশিয়ার হামলার জবাব আরও কার্যকরভাবে দেওয়া সম্ভব হয়।

তবে রাশিয়া এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের যে কোনো পদক্ষেপ সংঘাতের নতুন মাত্রা তৈরি করবে এবং এর পরিণতি হবে ‘গুরুতর’।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত সমন্বয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। ন্যাটোর বেশ কয়েকটি সদস্যদেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখলেও, ট্রাম্পের এই অবস্থান কিয়েভের প্রত্যাশিত সহায়তার গতি মন্থর করতে পারে।

প্রসঙ্গত, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও নীতিগত বিতর্ক চলছে। এক পক্ষ মনে করে, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে সাহায্য করতে পারে, অন্য পক্ষের মতে, এতে রাশিয়া-ন্যাটো সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়বে। ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্যে সেই বিতর্ক নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক