আমদানি-রপ্তানার আড়ালে দুই হাজার কোটি টাকার আত্মসাৎ: সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের পাঁচ মামলা

আমদানি-রপ্তানার আড়ালে দুই হাজার কোটি টাকার আত্মসাৎ: সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের পাঁচ মামলা

অর্থনীতি ডেস্ক

আমদানি-রপ্তানার তথ্য দেখিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ভাই এবং জনতা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলাগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি জানান, অনুমোদন পাওয়া পাঁচ মামলায় মোট ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে এক হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতা ব্যাংক পিএলসির লোকাল অফিস থেকে আমদানি-রপ্তানির কাগজপত্র জাল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। আসামিরা বিভিন্ন কোম্পানির নামে এলসি খোলার মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করেন, কিন্তু সেই অর্থ বাস্তবে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের পরিবর্তে বিদেশে স্থানান্তর করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২.২৫ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮.৯১ ডলার, কাঁচপুর এপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭.৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২.৪৬ ডলার আত্মসাৎ করা হয়।

সব মিলিয়ে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার আত্মসাতের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অনুমোদিত পাঁচ মামলায়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলাগুলোতে জনতা ব্যাংকের বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা যৌথভাবে আমদানি-রপ্তানির নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সেটি বিদেশে পাচার করেন।

দুদক জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলাগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে এলসি জালিয়াতি ও আমদানি-রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচারের যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে দুদকের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে চূড়ান্ত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত বলে গণ্য করা যাবে না।

অর্থ বাণিজ্য