মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য শর্ত পূর্ণাঙ্গ না হলে পুরোনো সিন্ডিকেটের পুনরাবৃত্তি হতে পারে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য শর্ত পূর্ণাঙ্গ না হলে পুরোনো সিন্ডিকেটের পুনরাবৃত্তি হতে পারে

বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার চালু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। তবে, মালয়েশিয়া সরকারের ১০টি নতুন শর্ত এর মাধ্যমে পুনরায় শ্রমিক নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই শর্তগুলো এক ধরনের আইনি বৈধতা দিচ্ছে পুরোনো সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও অনিয়মকে।

গত বছরের মে মাসে সিন্ডিকেটের দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে একাধিক বৈঠক হলেও, কাজের কোনো সঠিক সমাধান আসেনি। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য ১০টি শর্তসহ একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে এজেন্সির তালিকা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

এ শর্তগুলো পুরোনো সিন্ডিকেটের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারে বলে বায়রা (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি) এর সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “এ শর্তগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং বেশিরভাগ রিক্রুটিং এজেন্সি এটি পূরণ করতে পারবে না। বিশেষ করে, ১০ হাজার স্কয়ার ফুট অফিসের শর্তটি অত্যন্ত অর্থবহ এবং ব্যয়বহুল। এমনকি মালয়েশিয়াতেও কর্মী নিয়োগের জন্য কোনো এজেন্সির এত বড় অফিস নেই।”

এছাড়া, ৩ হাজার কর্মী পাঠানোর প্রমাণ এবং ৩টি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতাও শর্তের মধ্যে রয়েছে। এসব শর্ত মালয়েশিয়ার আগের সিন্ডিকেট সদস্যদের সুবিধা দেবে, যারা আগে অবৈধভাবে এসব শর্ত পূরণ করতো। বিশেষ করে, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং কর্মী পাঠানোর পরিসংখ্যান এখনকার বাস্তবতায় অনেক এজেন্সির পক্ষে সম্ভব নয়।

মালয়েশিয়া সরকারের উদ্দেশ্য এবং শর্তগুলোতে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কেননা ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে নতুন চুক্তির মাধ্যমে আবার শ্রমিক নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে, বর্তমান শর্তগুলো খুব সহজেই সিন্ডিকেটের দখলে চলে যেতে পারে, যা একদিকে যেমন অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দেবে, তেমনি অন্যদিকে শ্রমিকদের খরচও বাড়িয়ে তুলবে।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। একসময় কলিং ভিসায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি সেখানে কর্মসংস্থান করতেন। তবে গত বছর থেকে দেশটিতে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়, এবং এই পরিস্থিতির মধ্যে আবার নতুন শর্তের মাধ্যমে শ্রমবাজারের পুনরায় চালু হওয়া অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, বিভিন্ন শর্ত ও নিয়মের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, এটি যদি সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় তবে বাংলাদেশের জন্য শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে। এর ফলে নতুন এজেন্সিগুলোর জন্য সুযোগ সংকুচিত হবে, এবং পুরোনো সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ আরও বাড়বে।

সর্বোপরি, মালয়েশিয়া সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ এবং উপযুক্ত প্রক্রিয়া তৈরি করা, যা সব রিক্রুটিং এজেন্সিকেই সমান সুযোগ দিতে পারে এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয়