জাতীয় ডেস্ক
সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে এমন বিধান সংযোজন করেছে, যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
নতুন এই সংশোধন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডিতে থাকা কেউ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য থাকবেন না। এর মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। সংশোধিত বিধানটি নির্বাচনে প্রার্থিতা নির্ধারণে নতুন এক সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যে স্বার্থসংঘাত রোধে সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ (সংশোধন) এর মাধ্যমে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু নতুন বিধান কার্যকর করা হয়েছে। এসব বিধানের মধ্যে রয়েছে—আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিদের প্রার্থী হতে না পারার নিষেধাজ্ঞা, একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের পুনঃপ্রবর্তন, সমান ভোট পেলে পুনরায় ভোটগ্রহণের বিধান এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি।
নতুন সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনে জোটবদ্ধ দলীয় প্রার্থীরা নিজেদের দলের প্রতীকেই ভোট করবেন। প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। দলীয়ভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টে পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা প্রবাসী ও নির্দিষ্ট শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগকে সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, নির্বাচনে অনিয়ম প্রমাণিত হলে কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র নয়, বরং পুরো আসনের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহারকেও নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এর আওতায় বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভুয়া প্রচারণা বা ডিজিটাল প্রভাব খাটানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাছাড়া প্রার্থীর হলফনামায় অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হলে, নির্বাচিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পাবে নির্বাচন কমিশন।
দেড় দশক পর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা পুনরায় আইনি কাঠামোর মধ্যে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হলো।
নতুন সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রশাসনিক মহল মনে করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বিধান কার্যকর হলে প্রার্থিতা নির্ধারণ, নির্বাচনী আচরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।


