আইন আদালত ডেস্ক
ঢাকা, ৫ নভেম্বর ২০২৫: অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সভাকক্ষে। সভায় প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল অনলাইন জুয়াকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করার কার্যক্রম, যার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্সের ভিত্তিতে যেসব অ্যাকাউন্ট অনলাইন জুয়া কার্যক্রমে জড়িত থাকবে, সেগুলো ব্লক করা হবে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে বিটিআরসি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল পাঠানো শুরু করেছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, মিডিয়া হাউজগুলোকে তাদের ওয়েব ব্রাউজার এবং অ্যাডসেন্স সেটআপের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আশা করেন, এই নির্দেশিকা ভেটিং শেষ হলে সংশ্লিষ্ট মিডিয়া হাউজগুলোকে তা সরবরাহ করা হবে।
এছাড়া, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অনুমোদনের পর সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশ করা হবে।
বিশেষ সহকারী আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে এবং একটি কমন ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই ডেটাবেজে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম, এবং অপারেটরদের তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারি করা হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের ফোন নম্বরের ইন্টারনেট গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া, সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাবও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনলাইন জুয়া থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সুডো সদস্যদের চিহ্নিত করতে হবে, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংক স্লো করা, এবং যে নম্বর বা এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয় সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাচাইয়ের পর এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে, তবে ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী উল্লেখ করেন, সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করার মাধ্যমে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যাদের জুয়া খেলতে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি।
পেমেন্ট সিস্টেম এজেন্সির প্রতিনিধি জানান, সিম, মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সমন্বয় করলে অনলাইন জুয়ার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান সম্ভব। বিকাশের প্রতিনিধি জানান, গত দুই সপ্তাহে জুয়া কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৯৭টি মোবাইল নম্বর বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে তারা ক্রলিং ইঞ্জিন ব্যবহার করে অনলাইন ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া উন্নয়ন করছে।
সভায় আরও প্রস্তাব করা হয় যে, মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন করা উচিত, যাতে অনলাইন স্ক্যাম ও জুয়া প্রতিরোধে কার্যক্রম আরও কার্যকরী হয়। এছাড়া, ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়।
সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


