আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া ইউরোপের অন্য কোনো দেশে হামলা করবে না বলে মন্তব্য করেছেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা। তার মতে, সামরিক জোট ন্যাটো যেকোনো ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচিত এখন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি বাস্তবসম্মত শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
জার্মানির বার্লিনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্লিন গ্লোবাল ডায়ালগ সম্মেলনের ফাঁকে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এদি রামা এই মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
রামা বলেন, “ইইউ বা ন্যাটোর কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। রাশিয়া আলবেনিয়ায় হামলা করবে না, ইউরোপের অন্য কোনো দেশেও না।” তিনি আরও যোগ করেন, “ন্যাটো যেকোনো আগ্রাসনের জন্য প্রস্তুত। ভয় পাওয়ার কিছু নেই— এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট।”
ইইউয়ের ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ ন্যাটোর সদস্য। আলবেনিয়া ২০০৯ সালে ন্যাটোর সদস্য হয় এবং ২০১৪ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থী দেশ হিসেবে রয়েছে। রামা বলেন, “রাশিয়া নিয়মিতভাবে ইইউকে উসকানি দিচ্ছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলো প্রতিদিন নানা ধরনের উসকানি মোকাবিলা করছে। ইইউ নিজেকে রক্ষা করছে এবং আরও শক্তভাবে প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করছে।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘন ও ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছে। গত সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে ও রোমানিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে। একই মাসে ন্যাটো জানায়, তারা এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করা তিনটি রুশ মিগ–৩১ যুদ্ধবিমানকে আটক করেছে। তবে রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে “অকারণে আতঙ্ক সৃষ্টি”র অভিযোগ তোলে।
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তারা ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, রাশিয়া তথাকথিত “হাইব্রিড যুদ্ধ” কৌশল ব্যবহার করছে, যার মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা। সাম্প্রতিক ড্রোন অনুপ্রবেশ ঘটনাগুলোকেও তারা এই হাইব্রিড কৌশলের অংশ বলে মনে করছেন।
রামা বলেন, ইউরোপের উচিত যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সংলাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। তার ভাষায়, “ইইউ এখনো কোনো শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেনি, এটি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছেন, তখন ইউরোপেরও উচিত নিজেদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো এবং শান্তির দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা।”
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের শুরু থেকেই আলবেনিয়ার সরকার মস্কোর সমালোচনায় সরব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে আসছে। তবে রামার মতে, এখন প্রয়োজন একটি বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক সমাধান, যাতে যুদ্ধের অবসান সম্ভব হয় এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, আলবেনিয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো রুশ ড্রোন দেখা যায়নি এবং দেশটি কোনো নিরাপত্তা হুমকির মুখে নেই। “আমি একজন আলবেনীয়, আমাদের কোনো ভয় নেই। আলবেনিয়ায় রুশ শত্রুতার জায়গা নেই, কারণ এখানে রাশিয়ার প্রতি কোনো সহানুভূতিও নেই,”—যোগ করেন রামা।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও মন্তব্য করেন যে, তিনি এখনো কোনো ইউরোপীয় শান্তি পরিকল্পনা দেখেননি। ইউরোপীয় রাজনৈতিক মহলে এই অবস্থান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ছে, যদি না ইইউ ও পশ্চিমা দেশগুলো দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হয়।


