গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে হামাস ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ২২ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে।

বুধবার গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড। পরে সেটি রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দি বিনিময় ও মরদেহ ফেরত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, রেডক্রসের মাধ্যমে প্রাপ্ত মরদেহটি পরীক্ষার জন্য দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বলছে, ফেরত পাওয়া মরদেহগুলো শনাক্তের কাজ চলছে, কারণ আগের একটি মরদেহ নিখোঁজ তালিকায় থাকা কোনো বন্দির সঙ্গে মেলেনি। ইসরায়েলি পক্ষের দাবি, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার আগে সকল বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়াই তাদের অন্যতম শর্ত।

অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মরদেহ শনাক্ত ও উদ্ধার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। সংগঠনটির দাবি, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু বন্দির মরদেহ এখনও চাপা পড়ে আছে, যেগুলো উদ্ধার করতে সময় লাগছে।

চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তি অনুযায়ী, হামাস জীবিত ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরতের বিপরীতে ইসরায়েল ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করবে বলে নির্ধারিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর ফেরত দেওয়া ফিলিস্তিনি মরদেহগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং অনেক মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের টানা সামরিক অভিযানে গাজায় ৬৮ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ জন। বিস্তৃত বোমা হামলায় বিপুল পরিমাণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

চলমান যুদ্ধবিরতির আওতায় বন্দি ও মরদেহ বিনিময়ের এই প্রক্রিয়া গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সামান্য সুযোগ তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী ধাপে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দি ফেরত ও রাজনৈতিক শর্তসমূহে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ওপর।

আন্তর্জাতিক