আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িংয়ের আর্থিক সংকট গভীরতর, নিরীক্ষকের শঙ্কা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া নিয়ে

আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িংয়ের আর্থিক সংকট গভীরতর, নিরীক্ষকের শঙ্কা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া নিয়ে

অর্থনীতি ডেস্ক

বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে কোম্পানির দায় মোট সম্পদের চেয়ে প্রায় ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিস্থিতি

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে আনলিমা ইয়ার্নের সংরক্ষিত মুনাফা তহবিলে (রিটেইনড আর্নিংস) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। একই সময়ে কোম্পানির বিদ্যমান সম্পদের তুলনায় দায়ের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির চলমান কার্যক্রম আর্থিকভাবে টেকসই নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নিরীক্ষক।

কোম্পানিটি এখনও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে, আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যার মধ্যে বিদ্যমান সম্পদ (কারেন্ট অ্যাসেট) ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা

কোম্পানির দাবি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তবে আনলিমা ইয়ার্নের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যবসা সম্প্রসারণসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, তারা পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিক্রয় সম্প্রসারণে কাজ করছে। পাশাপাশি রপ্তানি আদেশ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির আশা, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা দ্রুত আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে এবং দায় কমিয়ে সম্পদ শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।

চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক ফলাফল

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সংরক্ষিত মুনাফা তহবিলে ঘাটতি আরও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকায়। তবে একই সময়ে কোম্পানির বিক্রয় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

আলোচিত তিন মাসে আনলিমা ইয়ার্নের বিক্রয় আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রয় আয় বেড়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা

আয় বাড়ায় কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ লোকসান কমেছে ৩১ লাখ টাকা

দীর্ঘমেয়াদি লোকসান প্রবণতা

গত পাঁচ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আনলিমা ইয়ার্ন তিন বছরেই লোকসান করেছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির নিট লোকসান ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, আগের বছরে ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। তার আগের বছরে কোম্পানি সামান্য ১৪ লাখ টাকার মুনাফা করেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান হয়েছিল ৩৩ লাখ টাকা, আর ২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা ছিল মাত্র ৮ লাখ টাকা

বিনিয়োগকারীদের পরিস্থিতি

১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত তারা ১০ থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষ ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের আর কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি।

২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০টি, যার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অর্থাৎ, কোম্পানি কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

অর্থ বাণিজ্য