রাজনীতি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ঢাকা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগত পথ গ্রহণ করে দাবি আদায়ে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে; জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন না করলে আন্দোলন তীব্র হবে। তিনি বলছেন, রাজপথে আন্দোলন শেষে দাবি আদায়ে তা কার্যকর না হলে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় বড় ধরনের গণসমাবেশ ও কর্মসূচি নেওয়া হবে বলেও জানান।
মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও পথযাত্রার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করেন। ডা. তাহের তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন যে, জুলাই সনদ (জুলাই জাতীয় সনদ) বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা আবশ্যক।
সমাবেশে ডা. তাহের বলেন, গত কয়েক মাসে দাবি আদায়ের প্রয়াসও চলমান; তবু সরকারের সময়ক্ষেপণ ও কৌশলগত বিলম্ব তাদের জন্য উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, “আমরা এখনও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি; সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব—তবুও ঘি লাগবেই,” এবং এভাবে দাবি আদায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকরি করার ইঙ্গিত দেন। তিনি সরকারের আলোচনা প্রস্তাবকেও উল্লেখ করে বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি না হলে আন্দোলন প্রকৃত রূপে গড়ে উঠবে।
ডা. তাহের প্রশাসনকে সমালোচনা করে বলেছেন, নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা চললে জনগণের আস্থা ক্ষুন্ন হবে; তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাচনী মাঠ পর্যায়ের (electoral level field) নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান করেন। তিনি ঘোষণা করেন, যদি স্মারকলিপি ও আলোচনার পর দাবি পূরণে অগ্রগতি না ঘটে তবে ১১ নভেম্বর ঢাকায় ‘চলো ঢাকা’ কর্মসূচি নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে নতুন ধরনের আন্দোলনী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
সমাবেশে জামায়াতের দাবি ও পরিকল্পনা ছাড়াও কয়েকটি বিষয়ও উঠে আসে: (১) দাবি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সমঝোতা ও আলোচনা অব্যাহত রাখার ওপর জোর, (২) গণভোট আয়োজনের খরচ-সহ বাস্তবায়নযোগ্যতাসহ প্রশাসনিক ও আর্থিক দিক বিবেচনা, (৩) নির্বাচনের বিরূদ্ধে প্রশাসনিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ ও নিরপেক্ষ তফসিল ঘোষণার দাবি। ডা. তাহের বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল না হওয়া এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
পাঠ্যভিত্তিক প্রেক্ষাপট হিসেবে উল্লেখ্য, বক্তৃতায় বারবার ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন ও জাতীয় পর্যায়ে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নেতারা ডা. তাহেরের বক্তব্য সমর্থন করেন এবং স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছে তা হস্তান্তর করা হয়।
নির্ধারিত কর্মসূচি ও ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে—প্রধানত নির্বাচনী পরিবেশ, ভোটাধিকারের তফসিল ও নির্বাচনপ্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতার ওপর। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে বৃহত্তর গণসমাবেশ ও সড়ক আন্দোলন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংলাপ এবং সংসদীয় প্রক্রিয়ার ওপর তা প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচি প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার গুরুত্বও বাড়ায়; একই সঙ্গে সম্ভাব্য সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা জটিলতার ঝুঁকিও বিবেচ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সাধারণত বলে থাকেন যে, বড় ধরনের গণভোট-সংক্রান্ত দাবি ও তাদের বাস্তবায়ন প্রস্তাবনা নিয়ে সরকার উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সময়সীমা নির্ধারণ করলে সংকট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও স্বচ্ছ ভোটপ্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা দাবি করা হয়।
এই কর্মসূচি ও ঘোষণার পরবর্তী পর্যায়ে সরকারি প্রতিক্রিয়া, প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে স্মারকলিপি গ্রহণের পর যে কোনও ধরণের আলোচনা আর কর্মপরিকল্পনা আগামী কয়েকদিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে লক্ষ্যণীয় হবে এবং তা নির্বাচনী পরিবেশ ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে।


