জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে খুলনার দাকোপে জয়া আহসান ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির সফর

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে খুলনার দাকোপে জয়া আহসান ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির সফর

পরিবেশ ডেস্ক

আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০কে সামনে রেখে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর শুভেচ্ছা দূত ও অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) খুলনার দাকোপ উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেন। সফরের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব প্রত্যক্ষ করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী কিভাবে অভিযোজনমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেদের জীবনযাত্রা গড়ে তুলছে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

এই সফরের মূল বার্তা ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বাস্তবতা অনুধাবন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় কার্যকর বৈশ্বিক পদক্ষেপ জোরদারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেন তারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অধিকতর অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিশ্চিত করেন।

দাকোপ সফরকালে প্রতিনিধি দল স্থানীয় সরকার বিভাগ, সুইডেন ও ডেনমার্কের সহায়তায় ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফ-এর বাস্তবায়নাধীন ‘লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (লজিক) প্রকল্প পরিদর্শন করেন। প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগণের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে টেকসই জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

প্রতিনিধি দল খুলনার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তারা প্রত্যক্ষ করেন কিভাবে স্থানীয় নারীরা জলবায়ু অভিযোজনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—পানির সংকট মোকাবেলা, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগগুলো স্থানীয় উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সফর শেষে জয়া আহসান বলেন, “দাকোপে এসে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, জলবায়ু পরিবর্তন এখানে কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের বাস্তবতা। নিরাপদ পানির সংকট, লবণাক্ততা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও মানুষ যে দৃঢ়ভাবে নিজেদের নতুন করে গড়ে তুলছে, সেটিই সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় স্থানীয় জনগণ যেভাবে অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তা মানবিক শক্তি ও আশার এক অনন্য উদাহরণ।”

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, “দাকোপ সফর জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব চিত্রকে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। এটি ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, বরং আজকের কঠিন বাস্তবতা। এখানকার নারীদের নেতৃত্ব ও দৃঢ়তা অনুপ্রেরণাদায়ক। লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা স্থানীয় সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে জলবায়ু চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করার প্রয়াস চালাচ্ছি। আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের এই অভিযোজনমুখী উদ্ভাবনগুলো বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরা প্রয়োজন।”

সফরটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে এটি জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন ও ন্যায়সংগত বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ের অভিযোজন উদ্যোগকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ও সহায়তা দেওয়া হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই সফরের মাধ্যমে ইউএনডিপি প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টার বাস্তব চিত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান ও দাবিকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিনোদন