খেলাধুলা ডেস্ক
এক মাসেরও বেশি সময় আগে শেষ হয়েছে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। তবে এখনো চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের হাতে ওঠেনি শিরোপার ট্রফি। ফাইনাল শেষে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি মহসিন নাকভির হাত থেকে সূর্যকুমার যাদব ও শুভমান গিলদের ট্রফি নিতে ভারতীয় দলের অস্বীকৃতি জানানো থেকেই শুরু হয় এই বিতর্ক, যা এখনও সমাধান হয়নি।
সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এসিসিকে সতর্ক করে জানায়—দুই দিনের মধ্যে ট্রফি হস্তান্তর না করা হলে বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে তোলা হবে। এই প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছিল, আইসিসির সর্বশেষ সভায় বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হবে। তবে প্রত্যাশিত সেই তীব্রতা দেখা যায়নি।
ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার দুবাইয়ে আইসিসির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় পিসিবি সভাপতি মহসিন নাকভি দেরিতে যোগ দেন। তাঁর উপস্থিতি নিয়ে শুরুতে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সভায় অংশ নেন। সভায় উভয় বোর্ডের মধ্যে যে কঠোর অবস্থান প্রত্যাশিত ছিল, তার পরিবর্তে তুলনামূলক শান্ত ও কূটনৈতিক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া। তিনি আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় দ্রুততম সময়ে ট্রফি ভারতের হাতে হস্তান্তরের দাবি জানান। সভার আনুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপস্থিত অনেকেই ট্রফি হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন।
এখনও পর্যন্ত ট্রফি হস্তান্তরের পদ্ধতি ও সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি। সভায় প্রস্তাব করা হয়—প্রয়োজনে বিষয়টির সমাধানে একটি যৌথ প্যানেল গঠন করা যেতে পারে। বিসিসিআই প্রতিনিধি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ভারতের হাতে যত দ্রুত সম্ভব ট্রফি তুলে দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে ট্রফিটি দুবাইয়ে এসিসির কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে, যা কোনো অনুমোদন ছাড়া স্থানান্তর করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন এসিসি সভাপতি নাকভি।
যদিও সভা চলাকালে পিসিবি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে সরাসরি তীব্র বাকযুদ্ধ হয়নি, তবে পিসিবি সভাপতি ও পাকিস্তানের ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে নাকভি নিজ দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত এশিয়া কাপ জিতলেও কেন ট্রফি এখনো প্রদান করা হয়নি—এই প্রশ্ন পাকিস্তানি গণমাধ্যম ও ক্রিকেট মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ক্রিকবাজ আরও জানায়, বিসিসিআই বা আইসিসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই অচলাবস্থা দ্রুত নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আইসিসির সভায়ও অনানুষ্ঠানিকভাবে উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
এশিয়া কাপের এই বিতর্ক দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহৎ ক্রিকেট পরাশক্তির কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ক্রিকেটবিশ্লেষকদের মতে, ট্রফি হস্তান্তর ইস্যু শুধু প্রশাসনিক জটিলতা নয়; এটি দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের পারস্পরিক আস্থার ঘাটতির দিকটিও স্পষ্ট করে তুলছে। এখন নজর রয়েছে—আইসিসি ও এসিসি কীভাবে এই সংকটের অবসান ঘটায় এবং কবে ভারতের হাতে পৌঁছায় তাদের প্রাপ্য এশিয়া কাপ ট্রফি।


