খেলাধুলা ডেস্ক
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে শিরোপা জিতে পেশাদার ফুটবল জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য অর্জন করেছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। তবে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেবেন কি না—সে প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। এবার বিশ্বকাপ ঘিরে মেসির পক্ষ থেকে এসেছে ইতিবাচক ইঙ্গিত, যা নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে সমর্থকদের মধ্যে।
সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ২২ দেশের নতুন জার্সি উন্মোচন করেছে। সেই প্রচারণামূলক ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন আর্জেন্টিনার বর্তমান ও সাবেক ফুটবলাররা। ভিডিওটিতে ছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি, অবসরপ্রাপ্ত মিডফিল্ডার আনহেল ডি মারিয়া, আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া এবং দলের কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়।
ভিডিও জুড়ে রদ্রিগো ডি পল, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, হুলিয়ান আলভারেজ ও নিকোলাস গঞ্জালেসের সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের পাশাপাশি দেখা যায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নতুন স্বপ্নের বার্তা। ভিডিওর ক্যাপশনে এএফএ লিখেছে, ‘সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত আসছে, আমি চার নম্বর চাই!’—যার অর্থ ২০২৬ আসরে চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা।
ভিডিওর শেষাংশে এএফএ সভাপতি তাপিয়াকে দেখা যায় কার্ড খেলতে খেলতে একই উক্তি করতে—‘আমি চার নম্বর চাই।’ এর পরেই দৃশ্যপটে আসেন লিওনেল মেসি। হাতে কার্ড তুলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও চাই।’ এই দৃশ্যটিকেই আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস মেসির আসন্ন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আমেরিকান বিজনেস ফোরামের এক সাক্ষাৎকারে মেসি ২০২৬ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে বলেন, “এই বিশ্বকাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। এটা হবে অসাধারণ একটি আয়োজন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত দল আসবে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আমার জন্য ছিল বিশেষ কিছু, কারণ এটি একজন ফুটবলারের জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য। পেশাদার ফুটবলারের জন্য বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতি অদ্বিতীয়।”
মেসির এই মন্তব্যকে অনেকেই তার দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বকাপের চেয়ে বড় কিছু নেই। আমি ভাগ্যবান যে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে সব অর্জন করতে পেরেছি। কোপা আমেরিকার পর বিশ্বকাপ জয় আমার ক্যারিয়ারকে সম্পূর্ণ করেছে। প্রতিটি ফুটবলারেরই এমন অনুভূতি পাওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্বকাপ দিয়েই সত্যিকারের সেরা নির্ধারিত হয়। মেসির বক্তব্যে পরোক্ষভাবে সেই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়—যেখানে তিনি আবারও বিশ্বকাপকেই সর্বোচ্চ অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে, চলতি মাসে বছরের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। আগামী ১৪ নভেম্বর আফ্রিকান দেশ অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্কালোনির দল। তার আগে স্পেনে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ঘোষিত দলে আছেন লিওনেল মেসিও। তবে ম্যাচে তার অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এর ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে প্লে-অফে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
তবুও, অ্যাডিডাসের সাম্প্রতিক ভিডিও এবং মেসির বক্তব্য নতুন করে আশা জাগিয়েছে ফুটবল বিশ্বে। অনেকেই বিশ্বাস করছেন, শারীরিকভাবে ফিট থাকলে এবং জাতীয় দল প্রস্তুত থাকলে ২০২৬ বিশ্বকাপেই হয়তো শেষবারের মতো আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেখা যাবে কিংবদন্তি লিওনেল মেসিকে—চতুর্থ শিরোপার স্বপ্নে বুক বাঁধা এক আর্জেন্টাইন দলের নেতৃত্বে।


