আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানের নামে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির সরকারের ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে গতকাল শুক্রবার এই পরোয়ানা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া’আল জামির।
পরোয়ানায় গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ জোট ‘ফ্লোটিলা’–র ত্রাণবহর আটকে দেওয়ার মতো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সরকারের এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এর ফলে অসংখ্য সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে।
ইসরায়েল এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’র এক বিবৃতিতে তুরস্কের এই পরোয়ানাকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের ‘রাজনৈতিক প্রচারণা কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এরদোয়ান তুরস্কের বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।”
এদিকে, তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস স্বাগত জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে হামাসের হাইকমান্ড বলেছে, “গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জনগণ ও তাদের নেতৃত্বের দৃঢ় নৈতিক অবস্থান আবারও প্রমাণিত হলো।”
তুরস্কের এই আইনি পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি চলছে। চলমান সংঘাতে গাজায় এখনো হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং মানবিক সহায়তার তীব্র সংকটে ভুগছে।
এর আগে, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলার বাদিপক্ষে গত বছর তুরস্কও নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে এই পরোয়ানাকে আন্তর্জাতিক আইনি চাপের ধারাবাহিকতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের এই পদক্ষেপ ইসরায়েল-তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে দুই দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি প্রত্যাহার বা সম্পর্ক ছিন্নের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, তবে আঙ্কারা ও তেল আবিবের মধ্যকার যোগাযোগ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় অবস্থান নিয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একাধিকবার গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তুরস্কের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনোভাবেই তারা এই পরোয়ানাকে বৈধ বলে স্বীকার করবে না।
বর্তমানে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে, বড় শক্তিগুলো কি সত্যিই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে কিনা।


