আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ লেবাননের বিনতে জ্বাইল এলাকায় একটি হাসপাতালের নিকটে ইসরায়েলি বাহিনীর ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মঙ্গলবার ওই এলাকায় একটি গাড়িতে ড্রোন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, এসব হামলা মূলত হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং তাদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করেছিলেন, লেবাননের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করা হতে পারে।
এক বছরেরও বেশি সময় আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। হিজবুল্লাহ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে এবং নিরাপত্তা অভিযানের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রেখেছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। তবে স্থানীয় সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা এখনো দক্ষিণ লেবাননের অন্তত পাঁচটি এলাকায় অবস্থান করছে এবং নিয়মিত সীমান্তবর্তী এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ওই সময় হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা চালায়, যার ফলে হাজারো বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলার পর দুই পক্ষের মধ্যে দুই মাসব্যাপী সংঘাত শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২৪ সালের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলা বন্ধ করেনি। বরং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামলার পরিমাণ আরও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। ওই হামলায় সংগঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রাণ হারান।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির পর থেকে লেবানন সরকারকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে হিজবুল্লাহ এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা দাবি করছে, হিজবুল্লাহ দেশের প্রতিরক্ষার অংশ এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে।
লেবানন সরকার জানিয়েছে, দেশজুড়ে অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এমন এক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলতে চাই যেখানে রাষ্ট্রই হবে সশস্ত্র বাহিনীর একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি।”
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা কেবল ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সম্পর্কের অবনতি নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


