আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, গাজায় চলমান সংঘাত কোনো সমান শক্তির যুদ্ধ নয়; এটি এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি নৈতিক পরীক্ষা।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মেক্সিকো সিটিতে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) রাষ্ট্রদূতদের গ্রুপের এক বৈঠকে বক্তৃতাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই বৈঠকে ফিলিস্তিনে চলমান মানবিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “২৮ দিন আগে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এ সময়ের মধ্যে ২৩৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাটিই বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমন যুদ্ধবিরতিকে শান্তি বলা যায় না, যেখানে এখনো শিশুদের দাফন করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে দৃঢ় ও অবিচলভাবে রয়েছে। জাতিসংঘে দেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হলে শান্তি টিকে না, আর অনাচার দেখে চোখ বন্ধ করে থাকা মানেই তাতে সহায়তা করা।”
গাজায় চলমান সহিংসতাকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে রাষ্ট্রদূত আনসারী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের দাবি করতে হবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পূর্ণ জবাবদিহি, তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং এমন এক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিশ্রুতি, যা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওআইসি পরিবারের ঐক্য কেবল বক্তৃতা বা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরাম ও প্রতিটি রাজধানীতে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কণ্ঠ আরও জোরালোভাবে তুলতে হবে। “আমাদের এই আহ্বান অব্যাহত রাখতে হবে, যতক্ষণ না বিশ্ব শুনছে,” বলেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
বৈঠকে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতরা গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানান। তারা ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের এই বৈঠকটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতি এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ অবস্থান শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা মানবিক সংকটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা যায়।


