ডায়াবেটিসসহ কিছু রোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নাও মিলতে পারে

ডায়াবেটিসসহ কিছু রোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নাও মিলতে পারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখেন বিশ্বের বহু মানুষ। তবে নতুন এক নির্দেশনায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ডায়াবেটিসসহ কিছু নির্দিষ্ট রোগ থাকলে ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জারি করা এক নির্দেশনায় ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম কেএফএফ হেলথ নিউজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাস ও কনস্যুলেটে নতুন গাইডলাইন পাঠানো হয়েছে, যাতে আবেদনকারীর রোগব্যাধি এবং চিকিৎসা ব্যয় বহনের সক্ষমতা যাচাইয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব রোগের চিকিৎসা ব্যয় দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল— যেমন হার্টের রোগ, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সমস্যা, স্নায়বিক ব্যাধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা— সেসব বিষয় এখন থেকে ভিসা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। এসব রোগের চিকিৎসা খরচ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে নির্দেশনায় সতর্ক করা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর নিজেদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে সক্ষম কি না, তা বিস্তারিতভাবে যাচাই করা হবে। যদি মনে হয়, আবেদনকারী চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হতে পারেন, তবে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

বর্তমানে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় সংক্রামক রোগ পরীক্ষা, টিকার ইতিহাস যাচাই এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তবে সর্বশেষ এই নির্দেশনায় নতুনভাবে কিছু অসংক্রামক রোগ যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ভিসা মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা ছিল না।

স্বাস্থ্য নীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ হ্রাস করা। ট্রাম্প প্রশাসন পূর্বেও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ‘পাবলিক চার্জ রুল’ নামে একটি নীতি চালু করেছিল, যেখানে অভিবাসীরা যদি সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হন, তবে তাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি সীমিত করা হতো। নতুন এই স্বাস্থ্য নির্দেশনাকে সেই নীতির সম্প্রসারিত রূপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা আরও জানান, এই নির্দেশনা কার্যকর হলে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে অতিরিক্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি বা সক্ষমতার প্রমাণপত্র জমা দিতে হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত আবেদনকারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া আগের তুলনায় কঠিন হয়ে উঠবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য দপ্তর এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে পাঠানো নির্দেশনাগুলো ইতোমধ্যে কার্যকর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই নীতির ফলে ভিসা প্রত্যাশীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আশা করে আসছেন। চিকিৎসা ব্যয় বহনের সক্ষমতা প্রমাণের নতুন শর্ত যুক্ত হওয়ায়, অনেকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক