বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলাসহ পাঁচ মামলায় আইভীর জামিন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলাসহ পাঁচ মামলায় আইভীর জামিন

জাতীয় ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৯ নভেম্বর) বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আইভীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

আদালত তার জামিন বিষয়ে জারিকৃত রুল যথাযথ ঘোষণা করে এই রায় প্রদান করেন। ফলে, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এখন জামিনে মুক্ত থাকতে পারবেন।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন আদালত। ওই সময় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম। পরে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন তার গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়।

ঘটনার প্রায় দুই মাস পর, ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত মিনারুলের ভাই নাজমুল হক সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ১২ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা দায়ের হয়।

এ মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস ঘটনার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক মামলা। এসব মামলায় আইভীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্ষতিসাধন, উসকানিমূলক বক্তব্য এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নের অভিযোগ আনা হয়।

গত ৯ মে শহরের পশ্চিম দেওভোগে নিজ বাসভবন থেকে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক একটি হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তীতে ২৭ মে আদালত মিনারুল হত্যা মামলায় তার দুই দিনের রিমান্ড শেষে পুনরায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আইভীর আইনজীবীরা জানান, এই মামলাগুলোর অধিকাংশেই তার বিরুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ উপস্থাপিত হয়নি। তারা যুক্তি দেন, আইভী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, জামিনের পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে সেলিনা হায়াৎ আইভী আপাতত জামিনে মুক্ত হলেও মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত মামলার পরবর্তী পর্যায়ে তদন্তের স্বচ্ছতা ও আইনি প্রক্রিয়ার ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বর্তমানে জামিনের আদেশ কার্যকর হওয়ার পর সাবেক মেয়র আইভী কারামুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। জামিন সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে তিনি মুক্তি পাবেন বলে জানা গেছে।

আইন আদালত