শেখ হাসিনা মামলার রায় ঘিরে প্রসিকিউশন অনিরাপদ বোধ করছে না: গাজী এমএইচ তামিম

শেখ হাসিনা মামলার রায় ঘিরে প্রসিকিউশন অনিরাপদ বোধ করছে না: গাজী এমএইচ তামিম

আইন ডেস্ক

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায় ঘিরে প্রসিকিউশন কোনো অনিরাপত্তা অনুভব করছে না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রসিকিউটর তামিম বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে এ মাসের ১৩ নভেম্বর। এজন্য প্রসিকিউশনের আলাদা কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। আমরা কোনো অনিরাপদ বোধ করছি না। প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হলো ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থার আনা অভিযোগগুলো প্রমাণ করা, সাক্ষ্য উপস্থাপন করা ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরা। ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব হলো সেই সাক্ষ্য ও যুক্তির আলোকে রায় প্রদান করা। এর বাইরে প্রসিকিউশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই।”

তিনি আরও বলেন, “১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নয়, বরং রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। অনেকেই হয়তো বিষয়টি ভুলভাবে বুঝেছেন। সাধারণত ট্রায়াল কোর্ট বা হাইকোর্টে নির্দিষ্ট দিনে রায় ঘোষণার তারিখ দেয়া হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে আগে ‘রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ’ করা হয়। এবার ট্রাইব্যুনাল রায়ের দিন নির্ধারণের তারিখ ঠিক করেছে ১৩ নভেম্বর। ওই দিনই আমরা জানতে পারব কবে রায় ঘোষণা হবে।”

প্রসিকিউটর তামিম রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে, এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর। প্রসিকিউশনের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো অতিরিক্ত চাপ অনুভব করছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যে কাজ করছে, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

এদিকে, শেখ হাসিনার মামলার বিচার কার্যক্রম গত ২৩ অক্টোবর সম্পন্ন হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ওই দিন আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই শেখ হাসিনার মামলায় সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাষ্ট্রনেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, বাংলাদেশেও সেই আইনের শাসনের প্রক্রিয়া অনুসৃত হচ্ছে। তিনি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

এরপর আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন, যার কিছু অংশে জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাটি চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের দিন (১৩ নভেম্বর) ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা সম্পূর্ণভাবে আদালতের কার্যপ্রণালির ওপর আস্থা রাখছে এবং বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে।

আইন আদালত