বিনোদন ডেস্ক
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে বহু তারকা রয়েছেন যাদের মধ্যে রয়েছে গভীর পারিবারিক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। সংগীত, অভিনয় ও নাট্যজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রতিভার ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে। এক নজরে দেখা যাক দেশের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের এমন কিছু বিশিষ্ট পরিবার ও তাঁদের আত্মীয়তার সম্পর্ক।
বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি নজরুলসংগীতশিল্পী প্রয়াত ফিরোজা বেগমের স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার কমল দাশগুপ্ত। তাঁদের দুই পুত্র হামিন আহমেদ ও প্রয়াত শাফিন আহমেদ দেশের ব্যান্ড সংগীতের গুরুত্বপূর্ণ নাম। হামিন আহমেদের স্ত্রীও গায়িকা—কানিজ সুবর্ণা। অন্যদিকে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী প্রয়াত সাদি মোহাম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ দুই ভাই, আর সংগীতজ্ঞ বারীণ মজুমদারের দুই পুত্র পার্থ ও বাপ্পা মজুমদারও সংগীতাঙ্গনের প্রভাবশালী নাম।
চিত্রনায়ক জাফর ইকবালের বোন ছিলেন প্রয়াত সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ এবং ভাই প্রয়াত সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ। নাট্যজগতে অভিনেতা ইনামুল হক ও তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী লাকী ইনাম জুটি হিসেবে সুপরিচিত। তাঁদের কন্যা অভিনেত্রী হৃদি হকের স্বামী লিটু আনাম, আর হৃদির বোনের স্বামী অভিনেতা সাজু খাদেমও নাট্যজগতের জনপ্রিয় মুখ।
প্রয়াত অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের বোন ওয়াহিদা মল্লিক জলি, তাঁর স্বামী রহমত আলী ও তাঁদের কন্যা তনিমা আহমেদ—তিনজনই অভিনয়ে যুক্ত। গায়ক ফেরদৌস ওয়াহিদের ছেলে হাবিব ওয়াহিদ সংগীতের আধুনিক ধারার পথিকৃৎ। প্রয়াত খালিদ হাসান মিলুর দুই পুত্র প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসানও সংগীতজগতে সক্রিয়। নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর স্বামী নির্মাতা অরুণ চৌধুরী এবং তাঁর বোন অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকারও শিল্পমাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত।
অভিনেতা প্রয়াত আলী যাকের ও অভিনেত্রী সারা যাকেরের সন্তান ইরেশ যাকের ও শ্রিয়া সর্বজয়া অভিনয় ও প্রযোজনায় জড়িত। অভিনেতা-নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর স্ত্রী শিমুল ইউসুফ ও তাঁদের কন্যা এষা থিয়েটার জগতে পরিচিত নাম। চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াতের ছেলে কাজী মারুফ, অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি এবং সুব্রত-দোয়েল দম্পতির মেয়ে দীঘি—সবাই চলচ্চিত্রে সক্রিয়।
সংগীত পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে গায়িকা দিঠি আনোয়ার ও ভাগনে শাহরিয়ার নাজিম জয় অভিনয় ও পরিচালনায় কাজ করছেন। প্রয়াত গায়ক আজম খানের ভাই প্রয়াত আলম খান ছিলেন বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক; তাঁর পুত্র আরমান খান ও আদনান খানও সংগীত জগতে কাজ করছেন।
প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ ও অভিনেত্রী ফাল্গুনি হামিদের কন্যা তনিমা হামিদ নিজেও অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত, তাঁর স্বামী সংবাদ পাঠক শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম। যাত্রাশিল্পী অমলেন্দু ও জ্যোৎস্না বিশ্বাসের মেয়ে অরুণা বিশ্বাস অভিনয়ে নাম করেছেন, আর অভিনেত্রী মৌসুমী নাগের স্বামী অভিনেতা সোয়েব—দুজনই ছোটপর্দায় জনপ্রিয়।
চলচ্চিত্রকার প্রয়াত খান আতাউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী প্রয়াত নীলুফার ইয়াসমিনের সন্তান সংগীতশিল্পী আগুন ও রুমানা ইসলাম। তাঁদের পরিবারের আরও সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন, ফরিদা ইয়াসমিন ও ফৌজিয়া খান—সবাই দেশের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী। সাবিনার কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিনও সংগীতের উত্তরাধিকার বহন করছেন।
অভিনেতা আবুল হায়াতের দুই কন্যা বিপাশা ও নাতাশা হায়াত অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত। বিপাশার স্বামী তৌকীর আহমেদ ও নাতাশার স্বামী শাহেদ শরিফ খান—দুজনই অভিনয় ও পরিচালনায় যুক্ত। প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাট চলচ্চিত্রে কাজ করছেন, আর অভিনেতা আলমগীরের কন্যা আঁখি আলমগীর সংগীতে সফল কণ্ঠশিল্পী।
অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদারের কন্যা ত্রপা মজুমদার নাট্যাঙ্গনের প্রিয় মুখ। সংগীতজ্ঞ মাহমুদুন্নবীর কন্যা ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরী দেশের সংগীতের দুই জনপ্রিয় নাম, তাঁদের ভাই পঞ্চমও সংগীতে যুক্ত।
অভিনেত্রী সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা তিন বোন, তাঁদের চাচাতো ভাই চিত্রনায়ক রিয়াজ। রিয়াজের স্ত্রী মডেল মুশফিকা তিনা এবং তাঁর আত্মীয়তার সূত্রে অভিনেতা ওমর সানী ও মৌসুমীও একই পরিবারে যুক্ত। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের পরিবারেও শিল্প-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার দৃশ্যমান—তাঁর দুই স্ত্রী সুমিতা দেবী ও সুচন্দা, এবং পুত্র বিপুল ও অনল রায়হান সবাই নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের এই পারিবারিক বন্ধন কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বরং শিল্প-সংস্কৃতির এক ধারাবাহিক ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিল্পের উত্তরাধিকার এভাবেই গড়ে তুলেছে দেশের বিনোদন জগতের সমৃদ্ধ ইতিহাস।


