ভয়ে মঞ্চ ছেড়ে পালিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন

ভয়ে মঞ্চ ছেড়ে পালিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন

বিনোদন ডেস্ক

ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সামনে বাংলা গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। ১৯৭৮ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ঘটে, যা এখনো তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে রয়ে গেছে।

সেই বছর বাংলাদেশ থেকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন, রাজ্জাক, ববিতা, রোজী আফসারীসহ আরও কয়েকজন শিল্পী। ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন লতা মঙ্গেশকর, অমিতাভ বচ্চন ও শচীন দেব বর্মণসহ বলিউডের প্রখ্যাত শিল্পী ও প্রযোজকরা।

এক আয়োজনে শচীন দেব বর্মণ সাবিনা ইয়াসমিনকে অনুরোধ করেন একটি বাংলা গান শোনানোর জন্য। তিনি জানান, “বর্মণ সাহেব বলেছিলেন, মা, তুমি বাংলাদেশের একটা গান শোনাও—একটা পল্লীগীতি গাও।” সাবিনা ইয়াসমিন তখন হারমোনিয়ামে ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা’ গানটি পরিবেশন করেন।

গান শেষে তিনি দেখেন, লতা মঙ্গেশকর অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেছেন। কিংবদন্তি শিল্পীকে দেখে ভয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। পরে আয়োজকেরা তাঁকে আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনেন এবং লতা মঙ্গেশকরের সামনে গাওয়ার সুযোগ দেন। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “উনি আমার গান শুনে এত প্রশংসা করলেন যে, আমি কথা বলতে পারছিলাম না। উনার মুখে আমার গানের প্রশংসা পাওয়া—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

সেই আয়োজনে শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেবল তিনজন—লতা মঙ্গেশকর, শচীন দেব বর্মণ এবং সাবিনা ইয়াসমিন। বাকিরা ছিলেন চলচ্চিত্রজগতের প্রযোজক, সংগীত পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী। স্মৃতিচারণায় সাবিনা ইয়াসমিন জানান, “গান শেষ হওয়ার পর শচীন দেব বর্মণ আমাদের দুজনকে দুই পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলেন। বলেছিলেন, ‘দুই দেশের দুই লতাকে নিয়ে ছবি তুলছি।’ ছবিটা এখন আর আমার কাছে নেই, কিন্তু স্মৃতিটা অমলিন।”

তখন সাবিনা ইয়াসমিনের বয়স প্রায় ২৫ বছর। চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার শুরু মাত্র। অন্যদিকে, লতা মঙ্গেশকর তখন ভারতীয় সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কিংবদন্তি। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “উনি আমার গলার খুব প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, আমার গলায় আলাদা একটা মাধুর্য আছে। সেদিন অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে বলিউডের বড় বড় প্রডিউসাররাও ছিলেন সেখানে, কিন্তু কথা বলার খুব একটা সুযোগ হয়নি।”

পরে আর লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখা না হলেও, তাঁর গানকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর ভাষায়, “আমি সারাক্ষণই উনার গান শুনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে লতাজির গান আমার মনে বাজে।”

লতা মঙ্গেশকর তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ২৫ হাজার গান গেয়েছেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ছাড়াও বিদেশি ভাষাতেও গান করেছেন তিনি; এর মধ্যে বাংলা গানই প্রায় ২০০টি। গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার একবার বলেছিলেন, “যেমন মাইকেল অ্যাঞ্জেলো মানে চিত্রকলা, শেক্সপিয়র মানে সাহিত্য, তেমনি ভারতীয় সিনেমার গান মানেই লতা মঙ্গেশকর।”

লতা মঙ্গেশকরের অনন্যতার বিষয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “উনার গলা আলাদা, গায়কি আলাদা। সৃষ্টিকর্তা উনাকে বিশেষ এক সুরেলা কণ্ঠ দিয়েছেন। সেই চল্লিশের দশক থেকে আজও তাঁর গান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। উনার প্রতিটি গান যেন নতুন করে হৃদয় ছুঁয়ে যায়।”

বিনোদন