আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় ২০১৪ সালে নিহত ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হাদার গোল্ডিনের মরদেহ ১১ বছর পর ইসরায়েলের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস কর্তৃপক্ষ মরদেহটি হস্তান্তর করে। সোমবার (১০ নভেম্বর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং গণমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
২৩ বছর বয়সে নিহত গোল্ডিন ২০১৪ সালের আগস্টে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের কাছে টহল দেওয়ার সময় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় প্রাণ হারান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তদন্ত অনুযায়ী, ওই অভিযানে গোল্ডিনসহ আরও দুই সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরে হামাস যোদ্ধারা গোল্ডিনের মরদেহ একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে নিয়ে যায়।
ইসরায়েলি বাহিনী তখন গোল্ডিনকে উদ্ধারের জন্য রাফাহ অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালায়, যা চার দিন স্থায়ী ছিল। ওই হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সাম্প্রতিক এই চুক্তির আওতায় মরদেহটি আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হাদার গোল্ডিনের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। জিম্মি ও নিহত সেনাদের মরদেহ ফেরাতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
হামাসের সামরিক শাখা রোববার জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে তারা ২০ জন জীবিত ও ২৮ জন নিহত জিম্মির মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। গোল্ডিনের মরদেহ ছিল সেই তালিকার অংশ।
গোল্ডিনের বাবা সিমচা গোল্ডিন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের জয়ের সংজ্ঞা হলো—আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা এবং আমাদের সৈন্যদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা। আজ আমরা সেই প্রতিশ্রুতির একটি অংশ পূরণ হতে দেখছি।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ গোল্ডিনের মরদেহ ফেরত পাওয়াকে ‘জাতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ’ বলে অভিহিত করেছেন। নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা কখনও হাল ছাড়িনি। হাদার গোল্ডিনের পরিবারের বেদনা গোটা জাতির বেদনা। আজ আমরা তাকে তার ঘরে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, যদিও দেরিতে।”
ইসরায়েলি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, গোল্ডিন ছিলেন একমাত্র নিহত ইসরায়েলি সৈন্য যার মরদেহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের আগেই গাজায় ছিল। তার মরদেহ উদ্ধারে ইসরায়েল এক দশক ধরে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।
বর্তমানে গাজায় এখনো চারজন জিম্মি অবস্থান করছেন—তিনজন ইসরায়েলি ও একজন থাই নাগরিক। ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে বাকি জিম্মিদেরও দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক আলোচনাসহ সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে।
গোল্ডিনের মৃত্যুর ঘটনা ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। তার মরদেহ উদ্ধারে চালানো অভিযানে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ওই চার দিনের হামলায় রাফাহ শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অন্তত একশত ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের তদন্তে তখনও উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ইসরায়েলের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিল, গোল্ডিনকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যেই সীমিত পরিসরে অভিযান চালানো হয়েছিল।
বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গোল্ডিনের মরদেহ ফেরত পাওয়া ইসরায়েলের জন্য একটি প্রতীকী অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি চলমান আলোচনায় পরবর্তী ধাপের জন্য পথ প্রশস্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


