এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি: মাঠ পর্যায় থেকে বয়স সংশোধন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের

এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি: মাঠ পর্যায় থেকে বয়স সংশোধন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের

জাতীয় ডেস্ক

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে বয়স সংশোধনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন অফিস থেকে প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সংস্থাটি। সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুনভাবে প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)-এর মাধ্যমে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এ এস এম হুমায়ুন কবীর জানান, সংশোধন প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এবং অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “বয়স সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখন থেকে মাঠ পর্যায়ের অফিসে না রেখে সরাসরি প্রধান কার্যালয়ে সম্পন্ন করা হবে। তবে অন্যান্য সাধারণ সংশোধনের বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়েই সম্পন্ন হবে।”

হুমায়ুন কবীর আরও জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এনআইডি সংশোধনের আবেদন অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্যে তথ্য পরিবর্তনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কমিশনের ডাটাবেজ সুরক্ষা ও তথ্যের অপব্যবহার রোধে সংশোধন প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা দেখছি কিছু মানুষ সত্যিই সমস্যায় পড়ে সংশোধনের আবেদন করছে, কিন্তু অনেকেই অপরাধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য পরিবর্তন করছে। এই প্রবণতা রোধ না করলে ডাটাবেজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তাই এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে।”

ইসি সূত্র জানায়, সংশোধনের নতুন এসওপি-তে শুধু বয়স নয়, আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রের জন্য নতুন নির্দেশনা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ, দালিলিক তথ্য প্রদানে বিলম্ব, এবং বছরের পর বছর ফেলে রাখা আবেদনের মতো সমস্যা মোকাবিলায় নতুন নিয়ম প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা থাকবে।

মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর জানান, এই প্রস্তাবগুলো কমিশনের আলোচনার জন্য তোলা হবে এবং চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরই কার্যকর করা হবে।

এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয় গতকাল রবিবার (৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সভায় জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব নির্ধারণ সংক্রান্ত আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি (এসওপি) সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এছাড়া সভায় ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি প্রণয়ণ প্রক্রিয়া, দেশে বসবাসরত এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা এবং নাগরিক পরিচয়ের নির্ভুলতা নিশ্চিত করাই এই নতুন প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য। সংশোধন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে জালিয়াতি ও অপব্যবহারের সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চূড়ান্ত অনুমোদনের পর নতুন এসওপি কার্যকর হলে বয়স সংশোধনসহ এনআইডি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সম্পন্ন হবে। এতে সংশোধন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং জবাবদিহিমূলক কাঠামোর আওতায় আসবে বলে কমিশন আশা করছে।

জাতীয়