অক্টোবরে চীনে ভোক্তা মূল্য সামান্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতিতে স্থবিরতার অবসান

অক্টোবরে চীনে ভোক্তা মূল্য সামান্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতিতে স্থবিরতার অবসান

অর্থনীতি ডেস্ক

অক্টোবর মাসে চীনের ভোক্তা মূল্য সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত কয়েক মাস ধরে চলমান মূল্যপতন ও স্থবিরতার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, কম ভোগব্যয় ও রিয়েল এস্টেট খাতে ঋণ সংকটের মধ্যেও এই সামান্য ঊর্ধ্বগতি বেইজিংয়ের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (NBS) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে জুলাই মাসে ভোক্তা মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও পরবর্তী দুই মাস ধরে পতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এই বৃদ্ধি মূলত খাদ্যপণ্য ও কিছু সেবার দামে সামান্য ঊর্ধ্বগতির ফল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সামান্য মুদ্রাস্ফীতি ইঙ্গিত দেয় যে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি এখনো চাপে রয়েছে, বিশেষ করে সম্পত্তি খাতের অস্থিরতা, উচ্চ যুব বেকারত্ব এবং দুর্বল ভোক্তা আস্থা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

করোনা মহামারির পর চীন শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশাল রিয়েল এস্টেট খাতে ঋণ সংকট দেশটির আর্থিক ব্যবস্থায় বড় চাপ তৈরি করেছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা চীনের রপ্তানি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে আরও মন্থর করছে।

তবে অক্টোবরের শেষ দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন, যার পর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে সমঝোতা হয়। এই ঘটনাকে বিনিয়োগকারীরা সাময়িক স্বস্তি হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে, উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI) — যা পাইকারি বাজারে পণ্য প্রবেশের আগের মূল্য পরিবর্তন নির্দেশ করে — অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও এটি এখনও নেতিবাচক, তবে আগের মাসগুলোর তুলনায় পতনের গতি কিছুটা কমেছে।

এনবিএস জানিয়েছে, ফ্যাক্টরি গেট বা উৎপাদন পর্যায়ের মূল্য হ্রাসের ফলে অনেক কোম্পানির মুনাফার মার্জিন সংকুচিত হচ্ছে। মূল্যযুদ্ধের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দাম কমাতে হচ্ছে, যা শিল্পখাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উভয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যদিও অক্টোবরের তথ্য কিছুটা স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়, তবে চীনের নীতিনির্ধারকদের জন্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে— কীভাবে ভোগব্যয় বাড়ানো, সম্পত্তি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং তরুণ বেকারত্ব কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি মুদ্রানীতি কিছুটা শিথিল করেছে এবং বাজারে তারল্য বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে এই নীতির প্রভাব বাজারে আরও স্পষ্ট হবে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা চীনের প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে।

সূত্র: এএফপি

আন্তর্জাতিক