রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীজুড়ে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি এবং জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার (১২ নভেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে সরকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার আহত হন। তিনি জানায়, আজিমপুরের বাসায় ফেরার পথে ককটেল বিস্ফোরণে তার পিঠে স্প্লিন্টার লাগে। যদিও তার অবস্থা গুরুতর নয়, তবে এই ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে।
ঢাকা শহরে গত কয়েকদিনে একাধিক বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার পর্যন্ত, রাজধানীতে চার দিনের মধ্যে ১৪টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ১১ দিনে ১৫টি স্থান থেকে অন্তত ১৭টি ককটেল বা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলি। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিধান করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল।
গতকাল (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দোলাইরপাড় মোড়ে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একই দিন, মিরপুর-১ নম্বরে শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটে। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন ভবনের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
রাজধানীজুড়ে অব্যাহত নাশকতার জেরে, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, সন্দেহজনক মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি চলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ফ্ল্যাশ মিছিল’ ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, হামলাকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪৪ জন আওয়ামী ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে এবং চলমান নাশকতার ঘটনায় সরকারের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, যা তাদের ঘরোয়া সহিংসতার পরিকল্পনার অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি একাডেমিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়েছে, যা একাধিক সন্ত্রাসী হামলার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে তারা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম জানিয়েছেন, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নাশকতার খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুর, সাভার, ফরিদপুর, খুলনা, মেহেরপুর এবং নারায়ণগঞ্জের কিছু উপজেলায় সহিংসতা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে পেট্রোল বোমা ও বিস্ফোরক উপকরণ ছিল। পুলিশ ধারণা করছে, এসব সরঞ্জাম নাশকতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে।
খুলনা, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের পেছনে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা শুধু নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীদেরই নয়, বরং তাদের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করছেন। তিনি বলেন, “যারা এই নাশকতার পেছনে রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং রাজধানীজুড়ে অভিযান আরও তীব্র করা হয়েছে।


