শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায়ের তারিখ আজ ঘোষণা হবে

শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায়ের তারিখ আজ ঘোষণা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ আজ নির্ধারণ করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং অন্যান্য বিচারকরা এ তারিখ ঘোষণা করবেন।

মামলার কার্যক্রমে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী সহ-সদস্য হিসেবে রয়েছেন। গত ২৩ অক্টোবর, মামলার সমাপনী বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরেন এবং শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পরে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন, এবং এর পাল্টা জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার পরবর্তী পাল্টা জবাব দেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।

এর পর, ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে, যা জাতি প্রথমবারের মতো জুলাই গণহত্যার ব্যাপারে রায় পাবে।

মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মতো ভয়াবহ অপরাধ।

এছাড়া, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও এই মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তবে, তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা এবং কামালের বিরুদ্ধে চরম দণ্ড চাওয়া হলেও মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন থাকবে। মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও তার মক্কেলের খালাস চেয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে, সাবেক আইজিপি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রায়ের দিন জানা যাবে।

মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীকে উপস্থিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট এবং শেষ হয় ৮ অক্টোবর। পরবর্তীতে, ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।

এদিকে, এই রায় ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দলের পক্ষ থেকে রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আগুন এবং ককটেল হামলার মতো সহিংসতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশজুড়ে বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে, প্রসিকিউশন বলেছে যে, তারা কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছে না, কারণ পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবিচলভাবে নজরদারি বাড়িয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

আইন আদালত