জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশ সরকার ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এই আদেশ জারি করার পর, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে গেজেটটি প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর, প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। এই আদেশটি দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা হয়েছে। ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে এবং ৮ আগস্ট ২০২৪-এ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, এই সফল গণঅভ্যুত্থান জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের প্রকাশ এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে ছিল। এই উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় সংস্কার প্রস্তাবনা গ্রহণ করে এবং সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন সরকারে জমা দিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান ও ওই সংস্কারের প্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে আলোচনা করে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণয়ন করে, যেখানে সংবিধান সংস্কারসহ ৩০টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সনদে সকল রাজনৈতিক দল ও জোট সম্মিলিতভাবে স্বাক্ষর করে এবং তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে।
এখন, সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি অর্জনের উদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করা হয়েছে। গেজেটে বলা হয়, এই আদেশ এবং জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত অংশগুলি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।
গণভোটে প্রশ্ন থাকবে, “আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?” এই প্রশ্নের জন্য হ্যাঁ অথবা না বিকল্প থাকবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গণভোটের আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে।
যদি গণভোটে জনগণ হ্যাঁ ভোট দেয়, তাহলে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ দেশের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে গঠিত হবে এবং ১৮০ কার্য দিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
সংবিধান সংস্কারের পর, তার পূর্ণাঙ্গ পাঠ সরকার সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হলো দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
এই আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কারের নতুন অধ্যায় শুরু হবে, যার ফলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এবং জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।


