আইন আদালত ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার, ১৭ নভেম্বর। রায় ঘোষণাটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পর্দায় প্রদর্শিত হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই বিচারকাজ দেখতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহমদসহ অন্যান্য সদস্য। গত ২৩ অক্টোবর সমাপনী বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতাদের বিচারের উদাহরণ উল্লেখ করে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। এরপর প্রসিকিউটর ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।
মামলার অপর একজন আসামি, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে চরম দণ্ড বা সর্বোচ্চ সাজা চাইলেও, ট্রাইব্যুনাল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজের বিবেচনায় রাখবে। মামুনের আইনজীবী অ্যাকুইটাল (খালাস) চেয়েছেন।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট এবং মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাগুলো তুলে ধরেন। সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ ধাপ সম্পন্ন হয় ৮ অক্টোবর, এবং এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
প্রসিকিউশন তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি প্রধান মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনে, যার মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। মামলার প্রতিবেদন ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেওয়া হয়।
রায়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় এটি দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি, এই রায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরেও থাকবে, কারণ এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।


