রুনা লায়লার ৭২তম জন্মদিন: সংগীতজগতের কিংবদন্তির বর্ণিল যাত্রা

রুনা লায়লার ৭২তম জন্মদিন: সংগীতজগতের কিংবদন্তির বর্ণিল যাত্রা

বিনোদন ডেস্ক

ঢাকা: উপমহাদেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা আজ (১৭ নভেম্বর) ৭২ বছরে পা রাখলেন। এই উপলক্ষে সংগীতপ্রেমীরা স্মরণ করছেন তার বিশাল সঙ্গীত জীবনের কৃতিত্ব। ষাটের দশকের শেষ থেকে শুরু হওয়া তার ক্যারিয়ার আজও উপমহাদেশের তিনটি দেশে সমান জনপ্রিয়। নানা ভাষায় গাওয়া তার গানগুলি আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।

ছয় দশকের যাত্রা

রুনা লায়লা তার ৬০ বছরের সংগীত জীবনে প্রায় ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। তার সঙ্গীত জীবনের সেরা অর্জনগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বের নানা প্রান্তে পরিচিত করা এবং বহু দেশের শ্রোতাদের মন জয় করা। রুনা লায়লা, যে কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেছেন, তার সঙ্গে উপমহাদেশের আরও নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের আইকন

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণকারী রুনা লায়লার সংগীত জীবনের শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তানে, ষাটের দশকের শেষ দিকে। পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত গায়ক আহমেদ রুশদির গায়কীতে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। তার প্রথম জনপ্রিয় গান ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’ ছিল পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়। এরপর তার কণ্ঠের জাদু ছড়িয়ে পড়ে ভারতে, এবং সেখানে ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

পরবর্তীতে, সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সাথে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবামটি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। তবে তার মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ, যেখানে তিনি ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘যাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯) ও ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪) সিনেমায় শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার কণ্ঠে ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’ ও ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িতে গেলাম’ মতো বাংলা লোকগানগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালজয়ী হয়ে উঠেছে।

অনুপ্রেরণার উৎস: মা

রুনা লায়লা তার সঙ্গীত জীবনের সাফল্যের পিছনে তার মায়ের অবদানকেই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। যখনই গান গাইতে যেতাম ছোটবেলায় মা সঙ্গে যেতেন।’ মায়ের এই সহায়তা এবং প্রেরণাই তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

জন্মদিনে ‘মাস্ত কালান্দার’

এবারের জন্মদিনটি বিশেষ হয়ে উঠেছে রুনা লায়লার জন্য, কারণ কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের পর্দা উঠছে তার কণ্ঠে। তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ গানটি ১৬ নভেম্বর রাতে প্রকাশিত হয়। এই গানটি রুনা লায়লার ক্যারিয়ারে বিশেষ স্থান দখল করেছে এবং এটি তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়।

তবে, রুনা লায়লা জানিয়েছেন, এবারের জন্মদিনের জন্য তার কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, এই দিনটি তিনি পারিবারিকভাবে উদযাপন করবেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। তার এই জন্মদিনে সংগীতপ্রেমীরা তার অবিস্মরণীয় কণ্ঠের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এবং তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

এক জীবনে বহু প্রাপ্তি

৭২ বছরে পদার্পণ করা রুনা লায়লা আজও সংগীতের জগতে অপরিহার্য নাম। তার কণ্ঠের সুর ও গানের জাদু কোটি কোটি শ্রোতার মন জয় করে চলেছে। উপমহাদেশের সংগীতজগতের ইতিহাসে তার স্থান অমলিন থাকবে।

বিনোদন