“শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হতাম” শেখ হাসিনার মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের বক্তব্য

“শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হতাম” শেখ হাসিনার মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের বক্তব্য

আইন আদালত ডেস্ক

পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ ও স্বচ্ছ হয়েছে। আইনজীবী আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার খালাসের বিষয়টি তার নিজস্ব প্রত্যাশা, তবে এটি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমি আমার মক্কেলের খালাস চাই, এটি স্বাভাবিক আশা। প্রত্যেক আইনজীবীরই এ ধরনের প্রত্যাশা থাকে।”

আইনজীবী আমির হোসেন আরও বলেন, “আমি কখনোই শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করিনি, কারণ এর জন্য আইনগত কোনো বিধান নেই। তবে, যদি কেউ আমার সঙ্গে কোনো ধরনের সহায়তা করত, তা আমার জন্য ভালো হতো। তবে, কোনো পক্ষ থেকে এ ধরনের সহযোগিতা আমার কাছে আসেনি।”

এদিকে, রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “তিনি আমার মক্কেল না, তাই তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। আমি শুধুমাত্র আমার মক্কেলের পক্ষে কথা বলবো।”

শেখ হাসিনার মামলার প্রসঙ্গে, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আরও জানান, তিনি বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং যথাযথতার ওপর আস্থা রেখেছেন। “বিচার প্রক্রিয়া ভালোভাবে হয়েছে, তা আমি মনে করি,” মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনার মামলায়, প্রসিকিউশন সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে থাকলেও, মামলার অন্য আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, শেখ হাসিনা ও কামাল খালাস পাবেন।

এদিকে, মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দোয়েল চত্ত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়ক পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, এবং জনসাধারণের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

এর আগে, ১৩ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী组成 বিচারিক প্যানেল এই তারিখ নির্ধারণ করেন।

এই মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা এবং ৯ কার্যদিবসে প্রসিকিউশন ও ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন হয়। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্যের পর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা এবং তার ভাই কামালকে সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে। তবে, মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালই নিবে।

মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট, যার মধ্যে তথ্যসূত্রের অংশ ২,১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,০৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২,৭২৪ পৃষ্ঠা। ৮৪ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এ মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আশা করছেন, ট্রাইব্যুনাল এক ন্যায়সঙ্গত রায় প্রদান করবে এবং তার মক্কেল শেখ হাসিনা খালাস পাবেন।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ