বিজবিডিনিউজ ডেস্ক
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বুলডোজারসহ এগোতে থাকা শিক্ষার্থীদের পথে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটায় এলাকা কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক দফায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা একটি বুলডোজারসহ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ধানমন্ডি ৩২ এলাকাটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা-ব্যবস্থার আওতায় থাকায় সেখানে যেকোনো ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিক্ষোভকারীদের একটি দল বুলডোজারসহ সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করায় পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জুলাই মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরবর্তী অভ্যুত্থান-পরবর্তী দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির কিছু অংশ কয়েক দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় স্থাপনার আংশিক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং আশপাশের সড়কে নজরদারি জোরদার রাখা হচ্ছে।
সোমবারের ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, কোনো দল বা ব্যক্তিকে আইনের বাইরে গিয়ে সহিংস কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ধাওয়া করা হলেও লাঠিচার্জ বা আটক করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পুলিশি বাধার পর এলাকাটি ত্যাগ করে।
এই ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে জানা যায়, জুলাই–আগস্টের আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং রাজসাক্ষী হিসেবে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে আজই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল দুপুরে রায় ঘোষণা করবেন। রায়কে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
রায়কে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অসন্তুষ্ট গোষ্ঠীর যেকোনো ধরনের সহিংস প্রবণতা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় সেখানে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এলাকাটির নিরাপত্তা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছে যে তাদের শান্তিপূর্ণ অগ্রযাত্রায় পুলিশ অতিরিক্ত বাধা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থীরা বুলডোজার নিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থায় তাদের থামানো ছাড়া উপায় ছিল না।
দিনব্যাপী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকা স্থানীয়রা জানিয়েছে, ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ার ঘটনার পর এলাকা তুলনামূলক শান্ত থাকলেও যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সে বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।
ঘটনার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরে যানবাহন তল্লাশিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, রায় ঘোষণার দিন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনবোধে আরও বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
সোমবারের ঘটনাপ্রবাহ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে সাধারণ মানুষের চলাচল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


