শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসির দণ্ড, সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ড

শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসির দণ্ড, সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ড

আইন-আদালত ডেস্ক

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

এই মামলায় শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক রয়েছেন, তবে সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে আছেন। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন মামলার অপর আসামি আবদুল্লাহ আল মামুনের শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের উপর ছেড়ে দিলেও, শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করা শুরু করেন। বিচারিক প্যানেলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ সহ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় প্রদান করেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে রায় পড়ার পর, ট্রাইব্যুনাল দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।

এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। প্রসিকিউশন ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয়, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২,১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,০৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকা ২,৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। মামলায় ৮৪ জন সাক্ষী ছিলেন, এবং ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়।

গত ১৩ নভেম্বর রায়ের জন্য ১৭ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ মামলার রায়ে যেহেতু বিচারের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল, তাই ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্ট এলাকা কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় সুরক্ষিত ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীও বিশেষ নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। বিশেষত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকেই দোয়েল চত্বরে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়।

এদিকে, শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে তীব্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে চলা এই মামলায় গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। আসামিরা, তাদের বিরুদ্ধের প্রমাণের ভিত্তিতে এবং রাজসাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করেছে।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক ছিল যে, শেখ হাসিনা এবং কামাল যথাযথভাবে এই অপরাধে জড়িত ছিলেন, এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হয়েছে। তবে রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে মামুনের শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবে। মামুনের আইনজীবী তার খালাস চেয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বিশ্বাস করেন যে, শেখ হাসিনা ও কামাল খালাস পাবেন।

এ রায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সূচিত হলো।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ