আচরণবিধি লঙ্ঘনে জিরো টলারেন্স, সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটের ব্যবস্থা

আচরণবিধি লঙ্ঘনে জিরো টলারেন্স, সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটের ব্যবস্থা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রথম সেশনের সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন,” এবং একইসঙ্গে ইসি আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন।

এ দিনের সংলাপে সিইসি আরও জানান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং ইসির মূল লক্ষ্য হবে আচরণবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান, যাতে তারা তাদের কর্মীদের আচরণবিধি সম্পর্কে অবহিত করে।

নির্বাচন কমিশনার আনওয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “ইসি কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না। আচরণবিধি পরিপন্থি যেকোনো কাজের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। নির্বাচনে একটি অবজারভেশন টিম থাকবে, যা নিয়মিত নির্বাচন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করবে।” তিনি আরও বলেন, “সাংবিধানিকভাবে বলা হয়েছে, দ্বৈত নাগরিক নির্বাচন প্রার্থী হতে পারবেন না, তবে তারা ভোট দিতে পারবেন।”

এছাড়া, নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ বলেছেন, “এককভাবে ইসি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক সময় কেন্দ্রে দখল হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সর্বদলীয় কেন্দ্র রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।”

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “প্রতিটি আসনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের একই মঞ্চে তাদের ইশতেহার ঘোষণা করার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও কলেজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে নির্বাচনে যুক্ত করা হয়েছে, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধে নির্বাচন কমিশনে আলাদা সেল গঠন করা হবে।”

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবনা

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বিএনএপি) জানায়, তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং ৫ আগস্ট লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছে। দলটি আরও দাবি করেছে, ১৮ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের তাগিদে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন।

বিকল্পধারা অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশে বড় দুটি দল আচরণবিধি মানে না এবং তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত। তারা ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার বিধান আচরণবিধিতে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। বিকল্পধারা আরও দাবি করেছে, পোস্টাল ব্যালটের ভোটার তালিকা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করতে হবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচন কমিশনের কাছে গণমাধ্যমের সহযোগিতা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে। তারা ফেক চেকিং ও এআই ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি জানায়।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করার পর নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা দেয়ার প্রস্তাব করেছে এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার পাশাপাশি অবৈধ ও কালো টাকার ব্যবহার রোধ করার দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি ইসির অধীনে আনার প্রস্তাব করেছে। তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আরপিওতে সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া, যানবাহনে নির্বাচনী প্রচারণা বা শোডাউন নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দিয়েছে।

এ সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ