আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গত ১০ নভেম্বর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণকে ‘আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কোনো তদন্ত সংস্থা দ্বারা প্রথমবারের মতো এ ধরনের হামলাকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে বর্ণনা করা হলো।
এনআইএ’র প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির পর্যটন এলাকা লাল কিল্লার কাছের একটি মেট্রো স্টেশনের সামনে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণটি একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করে চালানো হয়েছিল। বিস্ফোরণের ফলে গাড়ির চালক উমর নবীসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। তদন্তের ধারাবাহিকতায় এনআইএ নিশ্চিত করেছে যে হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি একটি হুন্ডাই আই ২০ সিরিজের গাড়ি ছিল, যার মালিক ছিল গ্রেপ্তার হওয়া আমির রাশিদ আলী।
এ ঘটনার পর এনআইএ আমির রাশিদ আলীকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি বিবৃতিতে জানায় যে, এই বিস্ফোরণটি ছিল একটি পরিকল্পিত আত্মঘাতী হামলা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আমিরের নাম উঠে এসেছে। তার দায়িত্ব ছিল হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, উমর নবীকে সহায়তা প্রদান করা এবং গাড়িতে বোমা স্থাপন করা। উল্লেখযোগ্যভাবে, হামলার দিনও আমির উমরের সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন, কিন্তু বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে তিনি গাড়ি থেকে নেমে যান।
উমর নবী, যিনি হামলার সময় গাড়ির চালক ছিলেন, জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি হরিয়ানার ফরিদাবাদ শহরের আল ফালাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হামলার পর জম্মু-কাশ্মির পুলিশ তার বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয় এবং তার দুই ভাই ও মাকে আটক করে।
এনআইএ জানিয়েছে, হামলার সঙ্গে আরও কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থাকতে পারে এবং তাদের নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত হতে পারে। তদন্তকারীরা আরও দাবি করছেন, হামলাকারীদের আর্থিক উৎস এবং বিদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সম্পর্কেও তদন্ত করা হচ্ছে। এনআইএ-এর বিভিন্ন টিম ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে এবং সম্ভাব্য আরও সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
এনআইএ-এর তদন্তে নতুন দিক উন্মোচিত হলেও, এ হামলার পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের প্রশ্নও সামনে এসেছে। এ কারণে এনআইএ আশা করছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নেটওয়ার্ক অনুসন্ধান করে পুরো চক্রকে ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে।
এদিকে, এই বিস্ফোরণের ঘটনা দিল্লির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে নিরাপত্তা খাতের গাফিলতির বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।


