অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন: সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন

অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন: সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সোমবার (১৭ নভেম্বর) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।

সিইসি জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বিবেচনায় কমিশন ধীর কিন্তু সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা জানি, নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে আমরা ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ নীতি অনুসরণ করে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।”

তিনি স্বীকার করেন, প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে উল্লেখ করেন, “দেশের গ্রাউন্ড সিচুয়েশন ও রিয়ালিটি সম্পর্কে সবাই অবগত। নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান উপদেষ্টা উভয়েই একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

নতুন উদ্যোগ ও ভোটাধিকার সম্প্রসারণ

সিইসি জানান, এবার নির্বাচনে কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেগুলো অতীতে আইনে থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি। তিনি বলেন, “আমরা প্রবাসী ভোটারদের জন্য ‘হাইব্রিড মডেল’ বা ‘লাকসি মডেল’ গ্রহণ করেছি। এতে রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে সম্পন্ন হবে এবং ভোট প্রদান হবে ডাকযোগে।”

এ ছাড়া নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তার ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং কারাগারে থাকা যোগ্য ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সিইসি বলেন, “যে সব সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনের দিন কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করবেন, তাদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থাও এবার করা হচ্ছে।”

আচরণবিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা

সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে দলীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করলে নির্বাচন আরও শান্তিপূর্ণ হবে।” তিনি জানান, আচরণবিধির খসড়া ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে জনগণের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত মতামত পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলো সংযোজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ভোটারদের ওপর রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব অনেক বেশি। আমরা আইন প্রয়োগ করতে পারি, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনতে রাজনীতিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”

নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও কমিশনের অবস্থান

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও কমিশন নির্বাচন আয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “নির্বাচন শুধু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নয়, এটি জনগণের অধিকার। তাই সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা চাই জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, ভোটকেন্দ্র যেন নিরাপদ থাকে এবং প্রশাসন যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। এজন্য কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপের মাধ্যমে আচরণবিধি, নিরাপত্তা, প্রশাসনিক সহায়তা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে মতবিনিময় করা হচ্ছে। কমিশন আশা করছে, এই আলোচনাগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ হবে।

সিইসি বলেন, “আমরা আশাবাদী যে আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চার একটি দৃষ্টান্তমূলক অধ্যায়।”

জাতীয়