ভারতে পলাতক অভিযুক্ত শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দাবি হেফাজতে ইসলামের

ভারতে পলাতক অভিযুক্ত শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দাবি হেফাজতে ইসলামের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ভারতে পলাতক বাংলাদেশি নাগরিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সোমবার সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও মামলা নিষ্পত্তির অগ্রগতি নিশ্চিত হলো। তারা আরও দাবি করেন, বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে বহিরাগত প্রভাব বিস্তারের যে সম্ভাবনা ছিল, তা রায় ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিহত হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছিল এবং বিভিন্ন সময়ে তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আদালত তার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। হেফাজত নেতা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও সাজেদুর রহমান বলেন, রায় প্রদানের মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়ার চূড়ান্ততা এসেছে, যা বিচারপ্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাদের দাবি, রায় ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট মামলার ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দীর্ঘ প্রতীক্ষা আংশিকভাবে পূরণ হলো।

হেফাজত নেতারা আরও বলেন, বিচারের রায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত ঘটনাবলির ধারাবাহিকতায় একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, এই রায় ভবিষ্যতে বিচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলোচনায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছতার ওপর আস্থা আরও সুদৃঢ় করতে সহায়তা করবে। তারা আশা প্রকাশ করেন, এর মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সমতা ও আইনের শাসনের ধারণা অধিকতর সুস্পষ্ট হবে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত অন্যান্য সহিংস ঘটনা ও দীর্ঘমেয়াদি মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি নতুন করে জোরালো হয়েছে। নেতারা বলেন, বিচারের মাধ্যমে অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যা দেশে আইনি কাঠামোকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করতে পারে। তারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

সংগঠনটির দাবি, বিচারিক রায়ের বাস্তবায়ন বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। তারা বলেন, রায়ের পরবর্তী পর্যায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংযোগ ও প্রতিপালন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিচালিত হলে মামলাটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নিশ্চিত হবে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত প্রভাবমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি।

বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো সুদৃঢ় করতে নীতিগত পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। তারা দাবি করেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠনে জনগণকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন নীতিমালা পর্যালোচনা ও গণভোটের মতো পদ্ধতি চালুর বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।

এছাড়া সংগঠনটি জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম বিচারপ্রক্রিয়ায় যে ভূমিকা পালন করেছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাদের মতে, বিচার পরিচালনার প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে মামলাটি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা আইনি কাঠামোর প্রতি আস্থাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও জটিল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের পদ্ধতিগত কঠোরতা বজায় থাকবে।

বিবৃতির শেষাংশে সংগঠনটি উল্লেখ করে যে, বিচারপ্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ একটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ন্যায়বিচারব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে পারে। তারা মনে করেন, এসব পদক্ষেপ দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামো ও নাগরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করবে এবং ভবিষ্যতে অনিয়ম বা ক্ষমতার অপব্যবহার কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ