নিজস্ব প্রতিবেদক
লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) প্রকল্পে চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতির জন্য ডেনমার্ককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গ্যান্ডলস হ্যানসেনের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ প্রসার, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
বৈঠকের শুরুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ড্যানিশ কোম্পানি এপিএম টার্মিনালের ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি জানান, এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগ, যা দেশের বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় আধুনিক কন্টেইনার সুবিধা উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি, এবং এ ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশকে আঞ্চলিক লজিস্টিকস কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি ডেনমার্কের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা স্মরণ করে জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়টি বাংলাদেশের জন্য নীতি সমন্বয়, বাণিজ্য সুবিধা বজায় রাখা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তিনি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডেনমার্কের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষতা উন্নয়ন এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ড্যানিশ স্টেট সেক্রেটারি লিনা গ্যান্ডলস হ্যানসেন বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন উদ্যোগগুলোকে প্রশংসা করেন এবং জানান, ডেনমার্ক একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়নিষ্ঠ বাংলাদেশ নির্মাণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি এলসিটি প্রকল্পকে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি আসবে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজার উপকূলে প্রস্তাবিত ৫০০ মেগাওয়াট অফশোর উইন্ড পাওয়ার প্রকল্পে সম্ভাব্য ডেনিশ বিনিয়োগের বিষয়েও অবহিত করেন, যা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশ–ডেনমার্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও আলোচনা করা হয়। উভয়পক্ষ স্বীকার করে যে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনী সমাধানে ডেনমার্কের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয় যে এলসিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের লজিস্টিকস সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা শক্তিশালী করবে। একইসঙ্গে সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য পরিবহনে আধুনিকীকরণ, পণ্য পরিবহনের সময় সাশ্রয় এবং রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে প্রবাহমানতা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে। বিনিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে উভয়পক্ষ প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও কারিগরি সমন্বয় অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
বৈঠকের শেষে উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। তারা জানান, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন কাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবে।
বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলারও উপস্থিত ছিলেন।


