খেলাধুলা ডেস্ক
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে আজ ঐতিহাসিক এক মাইলফলক স্পর্শ করছেন বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। আন্তর্জাতিক টেস্ট অঙ্গনে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খেলতে নেমেছেন নিজের শততম ম্যাচ। সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের পর এই ম্যাচে জিতেই দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।
টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ম্যাচটি শুরু হয়। গত সিলেট টেস্টের একাদশ থেকে স্বাগতিক দল দুটি পরিবর্তন আনে। pace attack শক্তিশালী করতে বাদ পড়েছেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। তাদের জায়গায় দলে ফিরেছেন দীর্ঘদিন চোট ও বিশ্রামের কারণে বাইরে থাকা ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। ইবাদত সর্বশেষ খেলেছিলেন প্রায় সাড়ে চার মাস আগে এবং খালেদের সর্বশেষ টেস্ট ছিল প্রায় সাত মাস আগে।
২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক টেস্টে অভিষেকের পর দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা, নিষ্ঠা এবং দলকে ভরসা দেওয়ার সক্ষমতা দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে তার শততম ম্যাচটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিকের এই মাইলফলক বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলের ড্রেসিং রুমেও ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মিরপুরের উইকেট সাধারণত ধীরগতির এবং স্পিন সহায়ক হলেও সকালের পর প্রথম সেশন পর্যন্ত ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ হতে পারে—এ বিবেচনায় ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ। সিরিজ নিশ্চিত করতে হলে ব্যাটিং লাইনআপের দায়িত্বশীল পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বোলারদের ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে অভিজ্ঞ বোলার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর দলের প্রত্যাশা থাকবে, যারা সিলেট টেস্টে স্পিন আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। পাশাপাশি ইবাদত ও খালেদের প্রত্যাবর্তনে পেস আক্রমণেও বাড়তি শক্তি এসেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলক উন্নত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে আসছে। তবে সিরিজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে প্রথম ইনিংসে শক্ত ভিত্তি গড়া হবে স্বাগতিকদের প্রধান লক্ষ্য। বিশেষ করে শীর্ষ চার ব্যাটার—মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক ও অধিনায়ক শান্ত—দলের স্কোরবোর্ড স্থিতিশীল করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নিয়ে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস মধ্যক্রমে লড়াইকে আরও দৃঢ় করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে আয়ারল্যান্ড তাদের প্রথম টেস্ট সিরিজে প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স দেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও তারা এখনও নতুন টেস্ট দল হিসেবে পরিচিত, তবু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উন্নতির প্রতিফলন টেস্টেও নিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছে। দলটির নেতৃত্বে আছেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। তার পাশাপাশি পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের মতো খেলোয়াড়রা আইরিশ দলের মূল ভরসা। মিরপুরের পিচ স্পিন সহায়ক হওয়ায় ম্যাকব্রাইনের ওপর দলের প্রত্যাশা বাড়তি।
দল দুটির পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াডে নতুন ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সমন্বয় দেখা গেলেও, ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেটে দলের প্রতিনিধিত্বকারী প্রজন্মের ধারাবাহিকতা, সংগ্রাম ও পরিশ্রমের প্রতীক। বিস্তৃত টেস্ট ক্যারিয়ারে অসংখ্য ইনিংসে দেশকে উদ্ধার করা, কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখার কারণে মুশফিক জাতীয় দলে এক অনন্য অবস্থানে পৌঁছেছেন।
ম্যাচের ফল যাই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে আজকের দিনটি বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে। তবে দল ও সমর্থকদের লক্ষ্য এই ঐতিহাসিক ম্যাচটি জয়ে পরিণত করা। সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের টেস্ট সামর্থ্য আরও সুদৃঢ় করার সুযোগ হিসেবেও এই ম্যাচকে দেখছে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ ও হাসান মুরাদ।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: অ্যান্ড্রু বালবার্নি (অধিনায়ক), পল স্টার্লিং, ক্যাড কারমাইকেল, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার, লরকান টাকার, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, স্টিফেন দোহেনি, জর্ডান নিল, ম্যাথু হামপ্রিস ও গ্যাভিন হোয়ে।


