নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর গুলিস্তান মোড়ে হোটেল রমনার সংলগ্ন একটি বহুতল মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে প্রাথমিকভাবে হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাত সাড়ে ১২টার কিছু পরেই হোটেল রমনার পাশের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের খবর তাদের কাছে পৌঁছে। খবর পাওয়ার পরপরই সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ২৮ মিনিটের প্রচেষ্টায় রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দ্রুত ইউনিট উপস্থিত হওয়ায় আগুন তৃতীয় তলার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার পর পুরো তলাটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা নিরাপত্তা বিধি মেনে ধাপে ধাপে ভেতরে প্রবেশ করে আগুনের উৎস শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। তবে ভবনের কাঠামো, ভেতরে দাহ্য পণ্য মজুত থাকার সম্ভাবনা এবং রাতের অন্ধকারের কারণে অভিযান সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হয়েছে। আগুনের সঠিক উৎপত্তিস্থল ও কারণ নির্ণয়ে তদন্ত টিম কাজ শুরু করবে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, মার্কেটটি দিনের বেশির ভাগ সময় খোলা থাকলেও রাতে অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকে। তবে কিছু গোডাউন বা স্টোররুমে বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু থাকে, যা থেকে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। যদিও তদন্তের আগে কোনো সম্ভাবনাকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসও আনুষ্ঠানিক তদন্ত ছাড়া আগুনের উৎস সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অগ্নিকাণ্ডের পর আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং নিকটবর্তী সড়কগুলোতে সাময়িকভাবে যান চলাচল ব্যাহত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আরও জানান, ভবনের ভেতরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, প্লাস্টিক সামগ্রী বা দাহ্য পণ্য থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই ঘটনাস্থলের ভেতরে প্রবেশ করে বিস্তারিত মূল্যায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রদান করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়েও পরীক্ষা করা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের মালিকপক্ষ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করবে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম যথাযথ ছিল কি না—এসব বিষয়ও পর্যালোচনা করা হবে। তদন্তের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, যাতে ঘটনার কারণ, ক্ষতি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল তদারকি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে আগুন পুনরায় জ্বলে ওঠার ঝুঁকি না থাকে। ভবনের ভেতর ধোঁয়া বের হওয়ার পথ নিশ্চিত করা, অবশিষ্ট তাপমাত্রা কমিয়ে আনা এবং সম্ভাব্য দাহ্য উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলমান রয়েছে।
ঘটনার কারণে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নে আনুষ্ঠানিক তদন্তের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করতে হবে। তদন্ত শেষ হলে অগ্নিকাণ্ডের কারণসহ সার্বিক তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


