মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট: বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত

মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট: বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত

খেলাধুলা ডেস্ক

বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ নভেম্বর ঢাকা টেস্টে খেলবেন তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট। এই ম্যাচটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত না হলেও তার জন্য বিশেষ মর্যাদা বহন করছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেটে অব্যাহত দায়িত্বপালনের পর মুশফিক দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন।

২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন মুশফিক। তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর। সেই ম্যাচে তিনি ১৯ বলে ৫৬ রান করেন এবং বাংলাদেশের টপ অর্ডার ইংলিশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ দেখাতে সক্ষম হয়। অভিষেকের পর থেকে মুশফিক বাংলাদেশের টেস্ট দলের স্থায়ী সদস্য হিসেবে অবিচ্ছিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। এই দীর্ঘ সময়কালে দেশের টেস্ট ইতিহাসে ৪০ জন ক্রিকেটার ক্যাপ পেয়েছেন, কিন্তু আজ শুধুমাত্র মুশফিকই শততম টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছেন।

মুশফিক এই ক্যারিয়ারে ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে পৌঁছাচ্ছেন এবং এশিয়ার মধ্যে তিনি ২৭তম। তার অভিষেকের সময়ের সহকর্মী ছিলেন হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও মোহাম্মদ রফিক। পরবর্তী সময়ে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহরা টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিকতা ও পারফরম্যান্সে মুশফিক একমুখী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।

দুই দশকেরও বেশি সময়ে মুশফিক দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। প্রথম ৫০ টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৩২-এর নিচে থাকলেও পরবর্তী ৪৯ টেস্টে গড় ৪৫-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। ২০১৭ সাল থেকে কেবলমাত্র চারজন ব্যাটার তার চেয়ে বেশি গড়ে রান করেছেন। মুশফিকের ব্যাটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে, যার মধ্যে দুটি উইকেটকিপার হিসেবে রেকর্ডযোগ্য। তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথমবার ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিনি ৩৪টি টেস্টে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মুশফিকের ব্যাটিং পরিসংখ্যানও অসাধারণ। ৯৯ টেস্টে ৪৮.৪০ গড়ে ১২টি সেঞ্চুরি এবং ২৭টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৩৫১ রান সংগ্রহ করেছেন। সর্বোচ্চ ইনিংসে অপরাজিত ২১৯ রান করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালে। দেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটারের তালিকায় তার নাম প্রথম সারিতে। ৪১টি ইনিংসে তিনি পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেছেন, ১৭টি ইনিংসে চার নম্বরে, এবং সাত ও আট নম্বরে ৪১টি ইনিংস।

মুশফিকের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারের নেপথ্যে রয়েছে অধ্যবসায়, শৃঙ্খলিত জীবন এবং খেলার প্রতি নিবেদন। প্রতিদিনের অনুশীলনে তিনি সতীর্থদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেন। মাঠে গিয়ে প্রথমে ওয়ার্মআপ, স্ট্রেচিং এবং ব্যাটিং অনুশীলন সম্পন্ন করেন, যা সহকর্মীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগায়। ড্রেসিংরুমে সবকিছু পরিপাটি রাখেন এবং সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে বিরল সম্মান অর্জন করেছেন।

মুশফিকের শততম টেস্ট শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়; এটি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতার প্রতীক। এই ম্যাচে তিনি মাঠে উপস্থিত থাকবেন ইতিহাস হয়ে, যেখানে হাজার হাজার ক্রিকেট ভক্ত এবং সতীর্থরা তার স্বীকৃতি জানাবেন। ব্যাটিং ইনিংস এবং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের এই বিশেষ অধ্যায় স্মরণীয় করে রাখার প্রত্যাশা রাখছেন।

মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট শুধুমাত্র একটি খেলোয়াড়ের নয়, দেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।

খেলাধূলা