জাতীয় ডেস্ক
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে মোট ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৪৪১ জন নিহত ও ১,১২৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৭ জন, যা মোট মৃত্যুর একটি বড় অংশ। একই সময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন। রেল সংক্রান্ত ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৪৩ জনের মৃত্যু এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক দুর্ঘটনা হয়েছে ১২১টি, যেখানে ১১২ জন নিহত হয়েছেন। সর্বনিম্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে, ২৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ফাউন্ডেশনটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৩৭ জন, বাস যাত্রী ৩০ জন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ও ট্রলি যাত্রী ২৪ জন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস যাত্রী ৭ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী ১০৩ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী ৩৪ জন এবং রিকশা-বাইসাইকেল আরোহী ৮ জন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলোয়ের ভৌগোলিক বণ্টন অনুযায়ী, ১৬৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮১টি গ্রামীণ সড়কে, ৮৭টি শহরের সড়কে এবং ৪টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। সংঘটিত দুর্ঘটনার ধরন অনুযায়ী ৯৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা, ১০৩টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৬০টি যানবাহনের পেছনে আঘাত এবং ৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও মানসিক-শারীরিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টার অসংগতিপূর্ণতা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞানহীনতা ও আইন অমান্য, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইন বাধাহীনভাবে প্রয়োগ করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা নির্মাণ, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক চাপ হ্রাস, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩.৯ জন নিহত হয়েছিল। অক্টোবর মাসে এই সংখ্যা বেড়ে ১৪.৭ জনে পৌঁছেছে, যা গত মাসের তুলনায় প্রাণহানির ৫.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। প্রতিবেদকরা জানান, এটি দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিবহন নীতি পুনঃমূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট করছে।


