এক যুগে বাংলাদেশের সিনেমা হল সংকট ও বন্ধের প্রবণতা

এক যুগে বাংলাদেশের সিনেমা হল সংকট ও বন্ধের প্রবণতা

বিনোদন ডেস্ক

গত এক দশকে (২০১৫–২০২৫) বাংলাদেশের সিনেমা হল শিল্প গভীর সংকটে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় একে একে সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, যার ফলে দর্শক সংখ্যা কমে গেছে এবং প্রেক্ষাগৃহ পরিচালনার আর্থিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। বন্ধের প্রধান কারণ হিসেবে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রয়েছে অর্থনৈতিক চাপ, ছবি সরবরাহের অভাব, ডিজিটাল বিনোদনের প্রসার এবং অবকাঠামোগত সমস্যার সমষ্টি।

বাংলাদেশে নব্বই দশকের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১,৪৩৫টি সিনেমা হল কার্যক্রম পরিচালনা করত। তবে বর্তমানে নিয়মিতভাবে মাত্র ১৭৪টি হল পরিচালিত হচ্ছে। প্রাদেশিক শহরগুলোতে বন্ধ হওয়ার সংখ্যা আরও বেশি, যেখানে খুলনায় ২০টির মধ্যে ১৪টি, নড়াইলে ছয়টি হল বন্ধ হয়েছে। ঢাকার রাজমণি (Razmoni) হল ২০১৯ সালে বন্ধ হয়েছে, চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস ২০২৩ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং নড়াইলের বন্ধ হলগুলোকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে।

বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ দর্শক সংকট। তথ্য অনুযায়ী, বছরের বেশিরভাগ সময়ে নতুন চলচ্চিত্র পাওয়া যায় না, ফলে দর্শক সংখ্যা কমে যায় এবং ব্যবসায়িক লাভজনকতা হ্রাস পায়। একটি হল পরিচালনার জন্য মাসিক আনুমানিক খরচ প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি। এছাড়াও, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং অনলাইন স্ট্রিমিং সেবার প্রসারের কারণে মানুষ বাড়িতে সিনেমা দেখায়, যা প্রেক্ষাগৃহে দর্শক উপস্থিতি কমিয়েছে।

চলচ্চিত্র কন্টেন্টের অভাবও প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দেশে উৎপাদিত মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রের সংখ্যা সীমিত, বিশেষ করে ঈদের বাইরে চলচ্চিত্রের মুক্তি কম থাকে। এছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও বেশ কিছু হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে রয়েছে পুরনো হলের সুরক্ষা ও সংস্কার ব্যয়বহুল হওয়া, যা অনেক মালিককে বিকল্প ব্যবহারের জন্য বাধ্য করেছে।

সিনেমা হল বন্ধ হওয়া কেবল বিনোদন বা ব্যবসার জন্যই প্রভাব ফেলে না, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও তৈরি করে। প্রাদেশিক ও গ্রামীণ অঞ্চলে হল বন্ধ হওয়ার ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলন কমে গেছে। এছাড়া নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য প্রদর্শন প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় শিল্পে প্রভাব পড়েছে।

সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে সরকারী সহায়তা এবং নীতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাশ্রয়ী ঋণ, কর-ছাড়, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, মাল্টি-ফাংশনাল প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ এবং দর্শক আকর্ষণের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রেক্ষাগৃহ পরিচালকদের জন্য পরিকল্পিত নীতি ও সমর্থন ব্যবস্থা শিল্প পুনরুজ্জীবনে সহায়ক হতে পারে।

সারসংক্ষেপে, গত এক দশকে বন্ধ হওয়া সিনেমা হলের সংখ্যা বাংলাদেশের বিনোদন শিল্পের একটি দীর্ঘমেয়াদী সংকেত হিসেবে প্রতীয়মান। প্রয়োজনীয় নীতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শিল্পের আধুনিকায়ন ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমা হলের ঐতিহ্য ও কার্যক্রম সংরক্ষণ কঠিন হতে পারে।

বিনোদন