নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু নির্বাচন করলেই হবে না, নির্বাচনের পরও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে বিভাজন ঘটানো হচ্ছে কি না, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস এবং বর্তমানে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যে ‘মবোক্রেসি’ বা জনবিচ্ছিন্ন শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছেন, তা কীভাবে দেশের শাসন ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলছে এবং বিশেষ করে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রায়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূলনীতি এবং সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। তিনি নির্বাচনের গুরুত্বের পাশাপাশি নির্বাচনের পরও সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং সংবিধানিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল ও জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্রীভূত না করে সমগ্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করছে এবং সেটি রক্ষা করতে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এটি বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি রাজনৈতিক সহমতের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি স্তরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে পরিচালনার গুরুত্বের উপর জোর দেন।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, শুধুমাত্র নির্বাচন পরিচালনা করলেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না, বরং নির্বাচনের পরও জনগণের অংশগ্রহণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতা এবং শাসন ব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করতে দমনমূলক প্রবণতা প্রতিহত করা অপরিহার্য। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সচেতন অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক সংস্কার কার্যকরভাবে স্থায়ী করা সম্ভব নয়।
বই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক বিভাজন এবং স্বৈরাচারবিরোধী শক্তির মধ্যে বিভ্রান্তি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মির্জা ফখরুলের বক্তৃতা থেকে বোঝা যায়, বিএনপি দেশব্যাপী রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচনের পাশাপাশি নির্বাচনের পরও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।


