সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হচ্ছে আজ

সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা, সম্মান এবং আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুক্রবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দিনটি উপলক্ষে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর স্থাপনায় বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনের শুরুতে দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি এবং বিমান ঘাঁটির মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। এতে দেশের কল্যাণ, সামরিক বাহিনীর অগ্রগতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সদস্যদের স্মরণে করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি, যিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, এবং প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এর পর সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান পৃথকভাবে নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে নির্ধারিত কার্যালয়ে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং কুশল বিনিময় করেন। পরবর্তীকালে বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মোট ১০১ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা স্মারক বিতরণ করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন), বিশেষ সহকারী (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ), তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেল ৪টায় সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আরেকটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, তিন বাহিনীর সাবেক প্রধান, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা, সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় অবস্থানরত খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাঁদের পরিবার, বিডিআর সদর দপ্তরের হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনাসদস্যদের উত্তরাধিকারী, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তিন বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত রয়েছেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রত্যক্ষ সম্প্রচার করা হবে।

ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর এবং খুলনা সেনানিবাস বা ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব অনুষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তা, বেসামরিক কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেবেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ ঘাঁটি এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নৌবাহিনী ঢাকাসহ খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও চাঁদপুরে বিশেষভাবে সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে, যা দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিকটস্থ ঘাটে নোঙর করে রাখা হবে। সাধারণ দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে এসব জাহাজ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধ, দেশগঠন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। শুক্রবারও বাংলাদেশ বেতার বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পাশাপাশি দিবসটি ঘিরে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা দিবসটির ইতিহাস ও তাৎপর্য নিয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

বিভিন্ন কর্মসূচি, আনুষ্ঠানিকতা এবং সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এ বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবস দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার গুরুত্ব নতুনভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ