রাজধানীতে মেট্রোরেল ট্র্যাকে অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার

রাজধানীতে মেট্রোরেল ট্র্যাকে অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি অংশে মেট্রোরেলের ট্র্যাক লাইনে স্কচটেপে মোড়ানো দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে এমআরটি পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মেইনটেনেন্স টিম প্রথম ককটেল দুটি দেখতে পায়। পরে এমআরটি পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিরাপদে ককটেলগুলো অপসারণ করে। এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেনি।

এমআরটি পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সোহেল চৌধুরী জানান, মেট্রোরেলের ২৮৮ ও ২৮৯ নম্বর পিলারের ওপর স্থাপিত ট্র্যাক লাইনে ককটেল দুটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত মেইনটেনেন্স কর্মীরা সন্দেহজনক বস্তুর অস্তিত্ব টের পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্র্যাকের ওপর পাওয়া সামগ্রী পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় যে সেগুলো অবিস্ফোরিত ককটেল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এসব ককটেল ট্র্যাকের ওপর রেখে যায়।

ইন্সপেক্টর সোহেল চৌধুরী আরও জানান, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্থানে মেট্রোরেলের নিজস্ব কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, কারণ ট্র্যাকটি অনেক ওপরে। ফলে সরাসরি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার সুযোগ সীমিত। তবে আশপাশের ভবন, বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং নিচের দোকানপাটের সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ককটেলগুলো কে বা কারা রেখে যেতে পারে সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ককটেল উদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে মেট্রোরেল অবকাঠামোর নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলার তদন্তে ট্র্যাকের নিরাপত্তাব্যবস্থা, দুর্বৃত্তদের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য এবং ঘটনার সময়সীমাসহ সব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।

গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ও অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় ডিএমপির পল্লবী থানার একজন এএসআই বিস্ফোরণে আহত হন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে তদন্ত এখনও চলমান থাকায় পুলিশ কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধারাবাহিকভাবে ককটেল বিস্ফোরণ বা এ ধরনের বিস্ফোরক সামগ্রী পাওয়া নগর নিরাপত্তার জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর আশপাশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং নিরাপত্তা কার্যক্রমকে জটিল করে তুলতে পারে। মেট্রোরেল দেশের প্রথম অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা, যার প্রতিদিন লাখো যাত্রী ব্যবহার করেন। তাই এর নিরাপত্তায় যেকোনো ধরনের ঝুঁকি রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

ঘটনাস্থলে ককটেল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ট্র্যাকের নিরাপত্তা রক্ষায় অতিরিক্ত টহল, নিয়মিত পরিদর্শন এবং নজরদারি জোরদারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেইনটেনেন্স টিমকেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিত নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়নের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

মেট্রোরেলের ট্র্যাকের মতো উচ্চস্থানে বিস্ফোরক সামগ্রী রাখা কীভাবে সম্ভব হলো—তা তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে, যেমন ককটেলগুলো নিচ থেকে কেউ নিক্ষেপ করেছে কি না, নাকি সেগুলো সরাসরি ট্র্যাকের ওপর উঠে রেখে গেছে। ট্র্যাকের কাঠামো, উঁচু উচ্চতা এবং সাধারণ মানুষের সেখানে প্রবেশ অক্ষমতা বিবেচনায় রেখে ঘটনাটির পেছনে একটি সুপরিকল্পিত তৎপরতা থাকতে পারে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন, যদিও এখন পর্যন্ত কোনো দৃঢ় সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই পুলিশ, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সদস্যরা এলাকাজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। ট্র্যাকের নিচেও টহল জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই বিশেষ নজরদারি চালু থাকবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা যৌথভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে। পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের বিস্ফোরণ ও ককটেল উদ্ধার ঘটনা ঘটছে, তার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, দ্রুত তদন্ত অগ্রগতির মাধ্যমে ঘটনাটির মূল পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ও দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাবে।

মেট্রোরেলের মতো অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধারের এই ঘটনা নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো সম্ভাবনা বাতিল করা হচ্ছে না, এবং ঘটনার সব দিক বিবেচনায় নিয়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ