গণভোটের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু করছে সরকার

গণভোটের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু করছে সরকার

জাতীয় ডেস্ক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৯ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ ও উপযোগী আইন প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই আইন প্রণয়নকে জরুরি ধরা হচ্ছে, কারণ গণভোট আয়োজনের পূর্বশর্ত হিসেবে একটি স্পষ্ট, কার্যকর এবং সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য আইনি ভিত্তি অপরিহার্য।

চিঠিতে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবসমূহ অনুমোদনের জন্য গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারি করা ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর ধারা–৬ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহায়ক আইন প্রণয়ন করার নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত থাকায় আইন প্রণয়নে বিকল্প সাংবিধানিক কাঠামো ব্যবহারের বিষয়ও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গণভোট পরিচালনার জন্য একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ব্যালট পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ কাঠামো, প্রচার-প্রচারণার বিধি এবং ফলাফল চূড়ান্তকরণের নিয়মসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। যেহেতু দেশে এখনো গণভোটসংক্রান্ত কোনো স্বতন্ত্র আইন নেই, তাই নতুন আইন প্রণয়ন সময়োপযোগী বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে সময়সীমা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিধিমালা তৈরি, মাঠ প্রশাসনের প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করার মতো ধাপগুলো সম্পন্ন করতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া এই নতুন আইন বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রাপ্ত নথিপত্র থেকে জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবসমূহ অনুমোদনের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজন রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যকর প্রস্তুতির জন্য আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করা জরুরি।

উপদেষ্টা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠক শেষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা জানিয়েছেন যে গণভোটসংক্রান্ত আইন তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে এবং চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এর প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে আসন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা তৈরি হবে বলে প্রশাসনিক সূত্র মনে করছে।

প্রশাসনিক আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ এক বিশেষজ্ঞ জানান, গণভোট আইন প্রণয়ন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, আইন প্রণয়ন শেষে গণভোটের পদ্ধতি, ভোট গ্রহণের নিয়ম, পর্যবেক্ষণ কাঠামো, ফলাফল চূড়ান্তকরণের ধাপ এবং প্রচার-প্রচারণার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জনগণকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া অপরিহার্য। স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে গণভোটের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণভোট আয়োজন সংবিধান সংস্কারের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত। তাই আইনি কাঠামো তৈরির প্রতিটি ধাপ জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা হলে প্রক্রিয়াটি আরো গ্রহণযোগ্য হবে। তাঁরা মনে করেন, গণভোট কেবল একটি প্রশাসনিক কিংবা আইনি উদ্যোগ নয়; এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ, স্থিতিশীলতা ও আস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।

উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একই দিনে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো গণভোটসংক্রান্ত কোনো অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংলাপেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে অধ্যাদেশ জারি হলেই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে।

সব মিলিয়ে, গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির অন্যতম প্রধান ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইন প্রণয়ন সম্পন্ন হলে গণভোট সংক্রান্ত প্রশাসনিক ও কারিগরি প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ